লাকি আক্তার, ঢাকা◾ নড়াইলের মাছিমদিয়ার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে লাল মিয়ার জন্ম। বড় হয়ে শেখ মোহাম্মদ সুলতান সংক্ষেপে এস এম সুলতান নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনচেতা ও ভবঘুরে সুলতান বাংলার পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ছুটি দিয়ে বাংলার এই মাঠ, ঘাট কিংবা প্রান্তরেই তিনি এদেশের সংস্কৃতিকে খুজে পেয়েছিলেন।
এদেশের কৃষকদের বার বার প্রতারিত হওয়া তাকে আলোড়িত করেছিল।
একেছেন চর দখলের লড়াই, হত্যাযজ্ঞ কিংবা স্বাস্থ্যবান কৃষক। এদেশের কৃষক সমাজ নিয়ে তার ভাবনার অন্ত ছিল না। গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজ তার শিল্পে প্রভাব বিস্তার করে আছে। সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম তিনি ভেবেছেন এবং শিল্পকর্মের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কৃষক সম্পর্কে তিনি বলেছেন, "আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা। [আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা] মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ইতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিলো। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। আর এই যত জমিদার রাজা মজারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রুগ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়।”
"আমি সবসময় কৃষকদের এঁকেছি, কৃষকরা যুগ যুগ ধরে অমানবিক পরিশ্রম করে চলেছে। ওদের উপজীব্য করেই সমাজটা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ওদের চিরকালই বিট্রে করা হয়েছে। ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানীরা করেছে, '৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অনেক আশা দেয়া হয়েছিল কিন্তু দে ওয়ার বিট্রেড। এই যে একটা এক্সপ্লয়েটেশন প্রসেস, আমার ছবি তার প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ। শোষণ করো, কিন্তু কোন মশা এদের শেষ করতে পারবে না, ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানীরা লুটেপুটে খেয়েছে, এখনো চলছে, কিন্তু এরা অমিত শক্তিধর। কৃষককে ওরা কখনো শেষ করতে পারবে না, আমার কৃষক এ রকম"
তার বক্তব্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলে গণমানুষের শিল্পী ছিলেন। শোষিত মানুষের প্রতি অন্তঃপ্রাণ এই শিল্পীকে জানাই জন্মবার্ষিকীর অভিবাদন।
ছবিঃ সুলতান এবং চরদখল
কে/সিআর/২৪