সানজিদা আমীর ইনিসী, ঢাকা
কালনেত্র◾
কোটা-সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ দলীয় ক্যাডার বাহিনীর হাতে মাত্র ২০ দিনে পাঁচ শতাধিক শহিদ হয়েছেন। কোনো কোনো হিসাবে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ব্যতীত আর কোনো আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় এত হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রাষ্ট্রীয় এই সহিংসতাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে সাভারের রানা প্লাজা ও ভ্যাট অফিসের মাঝামাঝি অবস্থানে যখন এমআইএসটি’র শিক্ষার্থী ইয়ামিন, তখন এপিসির ভেতর থেকে এক পুলিশ সদস্য বামদিকের একটি দরজা খুলে এবং আরেকজন এপিসির হ্যাচ খুলে ওপরে বেরিয়ে টেনে ইয়ামিনকে নির্মম ও অমানবিকভাবে সড়কে ফেলে দেন।
তখনও জীবিত ছিলেন ইয়ামিন। সড়কে পড়ে থাকা এ শিক্ষার্থীকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তার দুহাত দুদিকে ছড়ানো। পা দুটি ভাঁজ হয়ে পড়ে।
এ সময় এপিসির বামদিকের দরজা দিয়ে পুলিশের প্রথম সদস্য নেমে ইয়ামিনের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে তাকে এপিসির চাকার পাশ থেকে সরিয়ে মহাসড়কের মাঝের দিকে টেনে নিয়ে আসেন।
এর কয়েক মিনিট পর এপিসিতে থাকা দুজন পুলিশ সদস্য আবারও ইয়ামিনকে ধরে মূল সড়কের বিভাজকের ওপর থেকে সার্ভিস লেনে অমানবিকভাবে ফেলে দেন।
ইয়ামিনকে যেভাবে প্রথমে এপিসির ছাদ থেকে এবং পরে সড়ক বিভাজক পার করিয়ে সার্ভিস লেনে ফেলা হয়, তাতে মনে হচ্ছিল কোনো মানুষ নন, বরং কোনো পণ্যের বস্তা ফেলা হচ্ছে। করুণ, মর্মান্তিক ও অমানবিক এ দৃশ্য কাঁদিয়েছে অনেককে।
ইয়ামিনকে সার্ভিস লেনে ফেলে দেওয়ার পরপরই তার অবস্থানের কাছেই আরেকটি টিয়ারশেল পড়ে। শেলের ঝাঁঝালো গ্যাসের কারণে সবাই তখন ইয়ামিনকে সড়কে সেভাবেই ফেলে রেখে ওই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
প্রায় একঘণ্টা পর কয়েকজন আন্দোলনকারী ইয়ামিনকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় দেখা যায়, ইয়ামিনের বুকের বাম পাশ ও গলায় অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন।
ইয়ামিন ছিলেন এ আন্দোলনে ঢাকার সাভারে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী। তিনি রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো ইয়ামিন সহ সকল শহিদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
কে/সিআর/২৪