কালনেত্র ডেস্কে ◾
সম্প্রতি বিকাশের অতিরিক্ত লেনদেন চার্জ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এক লক্ষ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে যেখানে খরচ মাত্র ৫১ টাকা, সেখানে বিকাশের মাধ্যমে একই পরিমাণ টাকা পাঠাতে খরচ হচ্ছে ১৮৫০ টাকা, যা ব্যাংকের তুলনায় প্রায় ৩৬ গুণ বেশি। এই বিষয়টি নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন বিকাশের চার্জ এত বেশি?
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে ব্যাংকগুলোর অপারেশনাল খরচ অনেক বেশি এবং জটিল। ব্যাংকগুলোকে শাখা পরিচালনা করতে হয়, যা প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ভবন, অফিস স্থাপনা, কর্মচারী নিয়োগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং দৈনন্দিন অপারেশনের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও সেবা দরকার হয়। এছাড়াও কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য খরচ বহন করতে হয়। তবে, ব্যাংকিং খরচ এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও তারা গ্রাহকদের জন্য লেনদেনের চার্জ অত্যন্ত কম রাখে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রায় বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে, যেমন অভ্যন্তরীণ ফান্ড ট্রান্সফার, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদি।
বিকাশ একটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা দিয়ে থাকে। বিকাশের মূল ব্যবসায়িক মডেলটি লেনদেনের উপর ভিত্তি করে; তারা গ্রাহকদের পাঠানো প্রতিটি টাকা স্থানান্তরের জন্য একটি নির্দিষ্ট চার্জ ধার্য করে। বিকাশের অপারেশনাল খরচ ব্যাংকের তুলনায় অনেক কম। তাদের শারীরিক শাখা নেই, কর্মচারী সংখ্যা সীমিত, এবং তাদের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার খরচও তুলনামূলকভাবে কম। বিকাশ মূলত এজেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন সহজ এবং দ্রুত হলেও, তাদের চার্জ খুবই উচ্চ। তারা প্রতিটি লেনদেনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চার্জ ধার্য করে, যেমন- এক লক্ষ টাকা পাঠাতে খরচ হয় প্রায় ১৮৫০ টাকা। এই ধরনের চার্জ ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি এবং এটি সাধারণ মানুষের জন্য একটি গুরুতর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে।
বিকাশের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাদের সেবার চার্জ পুনর্বিবেচনা করা এবং সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা। বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অপারেশনাল খরচ কম হওয়া সত্ত্বেও এত অতিরিক্ত মুনাফা করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন লেনদেন সহজ এবং কম খরচে করতে চাইলে বিকাশকে অবশ্যই তাদের চার্জ কমাতে হবে।
গ্রাহকদের দাবি, মোবাইল ব্যাংকিং খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য ন্যায্য খরচ নিশ্চিত করা উচিত এবং বিকাশের অতিরিক্ত চার্জ কমানোর জন্য নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে, গ্রাহকরা বিকল্প সেবার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে, যা বিকাশের বাজারে অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কেসিআর—২৪