1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

দুর্নীতির পাহাড় গড়ে আত্মগোপনে থাকা হবিগঞ্জের সাবেক এমপি আবু জাহিরের শাস্তির দাবী-

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

 

নিজস্ব প্রতিনিধি◾

১৭ বছর আগে থাকতেন ভাড়া বাসায়। এখন হবিগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের সেই ভাড়া বাসার কাছে তার হয়েছে সাততলা বাড়ি। আছে হবিগঞ্জ স্টেডিয়ামের পাশে ৭০ কোটি টাকা মূল্যের ১০ বিঘা জমি। তেগুরিয়া পিডব্লিউডি অফিসের পাশে রয়েছে আরও একটি চারতলা ভবন।

হবিগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের জায়গা ও ধুলিয়া খালের পাশে নিরীহদের জমি দখল করেছেন। রাজধানী ঢাকাতেও রয়েছে তার প্লট-ফ্ল্যাট। মেয়ের বিয়েতে স্টেডিয়াম দখল করে হাজার হাজার মানুষের ভূরিভোজ করিয়েছেন। দামি বিলাসবহুল একাধিক গাড়িও রয়েছে। অথচ তার কোনো ব্যবসাও নেই। এ ছাড়া প্রবাসীর টাকা আত্মসাৎ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, বনাঞ্চল থেকে বনের গাছ কাটা ও সিরামিকসের মাটি উত্তোলন করে বন ধ্বংস, নিয়োগ-বাণিজ্য- এ রকম অসংখ্য অভিযোগে জড়িয়ে রয়েছে তার নামে। তার রোষানল থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। করেছেন নানাভাবে হয়রানি। আর এসব করেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) সংসদ সদস্য আবু জাহির। তিনি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার ভয়ে অনেক প্রবাসী এলাকায় যেতে পারছেন না। আবু জাহিরের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগের পাহাড় জমা পড়েছে বলে জানা যায়। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য আবু জাহির। নিজেকে তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছি। এরপর এ পর্যন্ত এমপি। তার দাবি, মানুষের জন্য ভালো কাজ না করলে কেউ তাকে বারবার এমপি নির্বাচিত করেননি।

হবিগঞ্জ ও লাখাইয়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অলিপুর এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন আবু জাহির। এখান থেকে তার মাসিক আয় কোটি টাকা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগ দিয়ে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা নিয়েছেন।২০২২ সালে ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা, এর সাথে সহযোগিতা করেছেন চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আকবর জিতু, লাখাই উপজেলার সব জলমহালে একসময় জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু ওই সব জলমহালে এখন জেলেদের জালা ফেলা নিষেধ। আবু জাহির তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে সেখানে মাছ চাষ করেন। ওই সব জলমহাল থেকে প্রতিবছর তার আয় অন্তত ২০ কোটি টাকা। জেলেদের কেউ জাল ফেলতে গেলেই তাদের এমপির লোকজনের দ্বারা নির্যাতিত হতে হয়। লাখাই-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজের জন্য ১৪৭ কোটি টাকার টেন্ডার হয়। কাজ পাওয়া ঠিকাদারের কাছ থেকে তিনি ১৩ কোটি টাকা আগেই নিয়েছেন। দীর্ঘদিনেও ওই কাজের কোনো অগ্রগতি ছিল না। এ নিয়ে ঠিকাদারকে এলাকাবাসী কিছু বললেই এমপির লোকজন তাদের ওপর চড়াও হয়। লাখাই-হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় কোনো উন্নয়নকাজ হলেই সেই কাজ পেতে আবু জাহিরকে ২০% কমিশন দিতে হয়। হবিগঞ্জ শহরের বড় ব্যবসায়ীদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। চাঁদা না দিলে বিভিন্নভাবে তাদের হয়রানি ও ব্যবসার ক্ষতিসাধন করা হয়। দলীয় নেতাকর্মী তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী এবং সুশান্ত দাস,সাংবাদিক মীর জুবাইর আলম তার অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন সহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা করা হয়। ওই মামলাগুলিতে জেল খাটেন শোয়েব চৌধুরী, সুশান্ত দাস,সাংবাদিক মীর জুবাইর আলম দীর্ঘদিন জেল কারাগারে ছিলেন এ ছাড়া হাফিজুর রহমান নিয়ন নামে স্থানীয় আরেক সাংবাদিককেও মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন এমপি জাহির। তার অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে মামলা করেন। হবিগঞ্জ শহরে তার এখন একাধিক বহুতল বাড়ি। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর থেকেই রাতারাতি এসব বাড়ির মালিক সহ হাজারো কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একেকটি বাড়ির দাম পাঁচ-ছয় কোটি টাকা।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত ঠিকাদারি কাজ হয়, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি জাহির। বেনামে নিজেই ঠিকাদারি করেন। নামমাত্র কাজ করেই বিল তুলে নেন। লাখাই উপজেলায় জাপানি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান জাইকা ও ফিলিপের নেওয়া প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করে উচ্চদরের বিল আদায় করা হয়েছে। এমপি হওয়ার পর থেকেই আবু জাহিরের বিত্তবৈভব বাড়তে থাকে। হবিগঞ্জ-ঢাকা ছাড়াও বিদেশেও তার বাড়ি-ফ্ল্যাট হয়েছে। বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী তার মেয়ের বিয়েতে তিনি কয়েক কোটি টাকা খরচ করেন। হবিগঞ্জ স্টেডিয়ামে ৪০ হাজার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে রাজকীয় খানাদানার আয়োজন করেন। বিভিন্ন উপজেলা, ইউপি চেয়ারম্যান, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুরো খরচের টাকা আদায় করেন। এ ছাড়া এমপি হওয়ার পর রেলওয়ে বাইপাস সড়কের ঈদগার পাশে এক কানাডাপ্রবাসীর ৩০ শতাংশ জমি দখল করেন। ওই জমির মূল্য অন্তত ২০ কোটি টাকা। তেগুরিয়া পিডব্লিউডি অফিসের পাশে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আরেকজনের ৩০ শতাংশ জমি দখল করেছেন। ওই জমির মূল্য প্রায় ছয় কোটি টাকা। এ ছাড়া বাল্লা স্থলবন্দরের পাশে সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে জানতে পেরে তিনি ওই এলাকায় ২০০ শতাংশ জমি কেনেন। পরে অধিগ্রহণ করলে সরকারের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চার গুণ ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায় করেন। হবিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যেসব লেনদেন হয়, সেই টাকারও একটি অংশ পান আবু জাহির। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের তাজুল গংয়ের তাজুলের কাছ থেকে প্রতি মাসে সেই টাকা তিনি বুঝে নেন। পুটিঝুড়ি ফরেস্ট এলাকা থেকে সিরামিকের জন্য সিলিকা বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বনের ধ্বংস করা হচ্ছে। খোয়াই নদীর বালু ওই সিলিকা বালু উত্তোলনের কাজও করে এমপির লোকজন। ওখান থেকেও একটি বড় অঙ্কের আয় হয় তার। এ ছাড়া ধুলিয়া খালের পশ্চিমে তার ভাই বদরুল আলমকে দিয়ে নিরীহ মানুষের জমি, অলিপুর সিটি পার্কের পাশের নিরীহদের জমি দখলের অভিযোগ আছে অভিযোগপত্রে। হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালের সব কিছু ক্রয় ও সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেন মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের হাজী মোকলেছ। মোকলেছের নামে বাস্তবে এমপিই এসবের নিয়ন্ত্রক। বর্তমানে এমপির একাধিক নতুন মডেলের পাজেরো ও একটি টয়োটা প্রিমিয়ার গাড়ি রয়েছে।হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের খাবার সব বিভিন্ন টেন্ডার তার লোকদের মাধ্যমে। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জমি অধিক গ্রহণে তার বিশাল সিন্ডিকেট শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগে এবং শিক্ষার্থী ভর্তি হতে হলে এমপি আবুজাহি কে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।

হবিগঞ্জের একজন বাসিন্দা জানান, আগে হবিগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন এমপি। পরে তার স্ত্রী আলেয়া জাহিরকে সভাপতি বানান। স্কুলের সামনে কিছু দোকান রয়েছে। সেগুলোর ভাড়া আদায় করেন এমপির ভাই বদরুল। দলীয় ত্যাগি নেতা কর্মীদের কে মুল্যায়ন না করে টাকার বিনিময় হাইব্রিড লোকদের দিয়ে দল বারি করেন। নিজে দলের জেলা সভাপতি ক্ষমতা বলে দলের ত্যাগি নেতাদের কে বিভিন্ন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে দলে গ্রুপিং তৈরী করেন। যার ফলে গত২০২৪ সালে সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জের ৪ টি আসনের মাঝে ২টি আসন পেয়েছিল আওয়ামীলীগ, বাকি ২টিতে স্বতন্ত্র বিজয়ী হয়।হবিগঞ্জ আওয়ামীলীগ পতনের একমাত্র কারণ এমপি আবু জাহির ও তার সহযোগী আকবর হোসেন জিতু। বর্তমানে বৈসাম্যরিরোঅরত ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ ই আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে এমপি আবু জাহির আত্মগোপন রয়েছেন।

এতে হবিগঞ্জের সাধারণ মানুষ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবু জাহিরের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

 

কেসিআর-২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট