দ.ক
কালনেত্র প্রতিনিধি◾
আজকের দুনিয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য ঠিকভাবে প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বইয়ের পড়া নয়, তাদের শেখাতে হবে বাস্তব জীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতা।
বাচ্চাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে এই বিষয়গুলির চর্চা করতে পারেন:
.
জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হয় তা আলোচনা করুন
সন্তানদের জীবনের সব ধরনের সমস্যায় আপনি সাথে থাকতে পারবেন না। তাই, কাল্পনিক দৃশ্য নিয়ে আলোচনা করুন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে জানতে চান।
যেমন, জিজ্ঞেস করতে পারেন শহরের অপরিচিত বা অজানা অংশে হারিয়ে গেলে তারা কী করবে?
সমস্যা সমাধানের এ ধরনের চর্চা বাচ্চাদের দ্রুত ভাবতে ও যেকোনো প্রতিকূলতা সামাল দিতে প্রস্তুত করবে।
.
লাইফ হ্যাক শেখান-
লাইফ হ্যাক হল এমন কিছু সাধারণ তবে কার্যকর উপায় যা নানা কাজকে সহজ করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কাচ ভেঙে যায়, হাতের পরিবর্তে এক টুকরা পাউরুটি দিয়ে কাচের টুকরাগুলি নিরাপদে তোলা যায়।
এছাড়াও, দ্রুত জামা ভাঁজ করার কৌশলও একটি কার্যকর লাইফ হ্যাক। আপনি নিজে যে সহজ কৌশলগুলি ব্যবহার করেন, সেগুলি সন্তানদেরও শেখান, যাতে তাদের দৈনন্দিন জীবনও সহজ হয়ে ওঠে।
.
অপরিচিত ব্যক্তি থেকে সাবধানে থাকতে শেখান
অপরিচিত ব্যক্তি থেকে সাবধান থাকা শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাদের শেখান যে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে এবং অপরিচিত কারো সাথে কথা বলা বা তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অপরিচিত কারো গাড়িতে উঠতে যেন তারা কখনোই না যায়।
যদি বাচ্চারা কোনো বিপদে পড়ে, তাদেরকে শেখান নিরাপদ ব্যক্তিদের চেনার উপায়। উদাহরণস্বরূপ, জনসমাগমে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী, দোকানের কর্মী বা সন্তানসহ অন্য মা-বাবার কাছ থেকে তারা সাহায্য নিতে পারে। তবে, যেকোনো পরিস্থিতিতে সাবধানতা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করুন।
.
নেগোসিয়েশন বা আপস-আলোচনা করতে শেখান
করিৎকর্মা ব্যক্তিরা নেগোসিয়েশন বা আপস করতে জানেন। তারা যা চান, তা অর্জন করতে কৌশল ও মেধাকে কাজে লাগান, যেকোনো আলোচনাকে ফলপ্রসূ করতে সক্ষম হন।
সন্তানদের নেগোসিয়েশন বা আপস-আলোচনা শেখানোর বেশ কিছু সুযোগ পাওয়া যায় প্রতিদিন। যেমন, পার্কে কোন পোশাকটি পরে যাবে, ছুটির দিনগুলিতে কতক্ষণ পড়বে অথবা উইকেন্ডে রাতে কী খাবে এই ব্যপারগুলি সম্পর্কে আপনার সন্তানদের ধারণা থাকবে।
এসব ব্যাপারে বাচ্চাদের পছন্দ নিয়ে কথা বলুন ও একসাথে সিদ্ধান্ত নিন। তাহলে দুই পক্ষের জন্য ভাল হবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে বাচ্চারা।
.
দৃঢ়চিত্তের মানুষ হতে উৎসাহ দিন
কখন ও কীভাবে দৃঢ় হতে হবে এই ব্যাপারটি বাচ্চাদের জানা থাকতে হবে। নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ কীভাবে অন্যদের জানাতে হবে সেটা তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শিখবে। বাচ্চাদের নিজেদের জন্য কথা বলতে, তাদের মতামত তুলে ধরতে, সম্মানের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে, প্রয়োজন হলে “না” বলতে শেখান।
তাদের জন্য নানারকম দৃশ্যপট অভিনয় করুন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা চর্চা করতে পারেন। দৃঢ়চিত্তের বাচ্চারা অন্যদের নেতিবাচকত আচরণ দেখে ভেঙে পড়ে না।
সন্তানদের পছন্দকে শ্রদ্ধা করুন। যেমন, আপনি যদি বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরতে চান ও সে নিষেধ করে, তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিন ও নিজের ইচ্ছা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
.
তাদের জন্য আদর্শ হোন
বাচ্চারা সজ্ঞানে ও অবচেতন মনে বড়দের আচরণ দেখে শেখে। পরিবারের সদস্য, গৃহকর্মী, অন্য শিশু, প্রতিবেশি, বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের সাথে সুন্দর আচরণ করুন।
বাচ্চাদের কেমন মূল্যবোধ শেখাতে চান তা ভাবুন। শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, উদারতা ও কৃতজ্ঞতার মত গুণগুলি সব সমাজেই প্রাধান্য পায়। বাসায় এই মূল্যবোধগুলির চর্চা করলে বাচ্চারা তা দেখে শিখবে, মানুষজনের সাথে মিশতে শিখবে, পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে, অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করতে শিখবে এবং নিজের ও অন্যদের চাহিদার কথা মাথায় রাখবে।
.
আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন
বাবা-মায়েরা প্রায়ই বাচ্চাদের সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রলুব্ধ হন। তবে, মনে রাখবেন এমনটা করলে বাচ্চারা ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপারে কিছুই শিখবে না।
সবসময় আগলে রাখা বাচ্চাদের মধ্যে বড় হয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চাদের নিজেদের সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে দিন। তারা ভুল করবে, সেটা মেনে নিন।
বাচ্চারা সাহায্য চাইলে তবেই সাহায্য করুন, অথবা যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে তাদের সাহায্য করুন।
বাচ্চাকে কিছু চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ ও স্বাধীনতা দিন। এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে, সফলতাই একমাত্র দিক নয় জীবনের। আমরা বড়রা যেমন ছোটবেলা পার করে এসেছি, বড় হতে হতে নিজে থেকে উপলব্ধি করে অনেক কিছু শিখেছি, এটা আপনার শিশুর সেই শেখার সময়। একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে তাকে উপলব্ধি করার সুযোগ দিন।
ভুল ও পরাজয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলি আমরা পেয়ে থাকি। বাচ্চাদের দিকনির্দেশনা দিন, তবে হস্তক্ষেপ করবেন না, তাদের পাশে থাকুন তবে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেবেন না।
.
বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন বাচ্চাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ নানারকম পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য ও আত্মবিশ্বাস দুই-ই তাদের থাকে। তাই, ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের এই জরুরি দক্ষতাগুলি শেখান।
দ.ক.সিআর—২৪