✍️
সম্পাদকীয়◾
Best quality replica watches uk is swiss watch brands 1:1 fake watches,high-quality swiss movement.
একটি ভালো সংবাদপত্র কীভাবে করা যায়- এমন প্রশ্নের উত্তর খুব একটা সহজ কথা নয়। তারপরও অভিজ্ঞতার আলোকে এর কিছু উত্তর দেওয়াই যায়। এতে যদি কারো সামান্য উপকারও হয়।
দেশে নতুন একটি পরিবেশ বা আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন মিডিয়া আশা দেখাবে নিশ্চিত। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এমন পরিবেশ আমার কাছে খুবই আশা জাগানিয়া। এর আগে ভীতি জাগানিয়া একটি মহামারির পর দেশের অর্থনীতি যখন টালমাটাল ছিলো, সেই সময়ও কিছু মিডিয়া বিনিয়োগকারী উৎসাহ নিয়ে নতুন মিডিয়া চালু করেছিলেন। এখন ত দারুণ এক সময় নতুন মিডিয়ার জন্য।
আমরা প্রায়শঃ যেটা দেখি, বিরাট আয়োজন করে মিডিয়ার যাত্রা শুরু করে কিছুদিনের ব্যবধানে সেগুলো হয় বন্ধ হয়ে যায় বা পরে কাটছাট করে বনসাই গোছের মিডিয়া হিসেবে টিকিয়ে রাখা হয়। ফলে সেসব মিডিয়া আর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় না। পেশাদার সাংবাদিকদের দীর্ঘশ্বাস তাই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। নতুন মিডিয়াগুলো যাতে সেই ব্যর্থতার মিছিলের নবীন সদস্য না হয়, তার জন্যই মূলত এই লেখার অবতারণা।
মূলত লেখার মতামতগুলো নিতান্তই আমার পর্যবেক্ষণ থেকে। আমি কাজ করছি একেবারে ভিন্নধারার একটি নিউজ পোর্টাল দৈনিক কালনেত্রে, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে। কালনেত্রে কাজ করতে গিয়ে আমি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের নানা খুঁটিনাটি বিষয়। আমার মনে হয়েছে একটি সংবাদপত্রের সাফল্য নির্ণীত হয় সাধারণত তিনটি বিচারে—
এক. সার্কুলেশন বা জনপ্রিয়তা (প্রধানতম লক্ষ্য)
দুই. গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা (নিগূঢ়তম লক্ষ্য)
তিন. বাণিজ্যিক সাফল্য (অস্তিত্বগত লক্ষ্য)
এই তিনটি বিষয় অর্জন করা গেলেই বলা যাবে একটি দৈনিক সফল ও সার্থক হয়েছে। এ তিনটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কী করা যেতে পারে, তার জবাব খুঁজলেই মিলবে মিডিয়া জনপ্রিয় করার মূল সূত্র বা রহস্য।
বিনিয়োগকারী◾
মিডিয়া সম্পর্কে না জেনে যে বিনিয়োগকারী এ ব্যবসায় আসেন, তাঁর মাধ্যমে পেশাদার মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গড়া সম্ভব নয়। তাঁকে যেভাবেই হোক মিডিয়া এবং মিডিয়া ব্যাবসা সম্পর্কে মোটামুটি জানতেই হবে। পেশাদার মিডিয়ার জন্য পেশাদার বিনিয়োগকারী জরুরি।
সম্পাদক◾
আমি লক্ষ্য করেছি, বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তারা সম্পাদক বানানোর জন্য টিভির জনপ্রিয় টকশোর মুখ খোঁজেন। কেউ খোঁজেন সাংবাদিক নেতা। বিনিয়োগকারীদের ধারনা, যে যত জনপ্রিয় তিনি ততো যোগ্য। এ যুগে মিডিয়া সম্পাদকের জনপ্রিয়তায় চলে না। আমি বলছি না যে, টকশো যাঁরা করেন তাঁরা সবাই অযোগ্য, বা যাঁরা প্রেসক্লাব করেন, তাঁরা সবাই অযোগ্য। মূলত এবং কার্যত মিডিয়া চালানোর দক্ষতা ও যোগ্যতা যাঁদের বেশি তাঁদের হাতে সাংবাদিক সংগঠন করবার মতো অতো সময় সেভাবে থাকে না। বাংলাদেশে আপনি যদি মিডিয়ার একজন পেশাদার বিনিয়োগকারী হতে চান, আপনাকে যে কোনো মূল্যে দক্ষ, পেশাদার ও নৈতিক গুণসম্পন্ন একজন সম্পাদককে খুঁজে পেতে হবে। মোটের ওপর একজন সম্পাদকের সুনির্দিষ্ট দক্ষতা, পেশায় পর্যাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, স্মার্ট ও ফোকাসড এবং চাপের সময় অটল থাকার মানসিকতা থাকলেই তাঁকে আপনি বেছে নিতে পারেন। তবে সবার আগে খেয়াল রাখবেন তিনি নৈতিকভাবে সৎ কিনা। আরও মনে রাখবেন পত্রিকা ভালো না হলে সম্পাদক যতই বিখ্যাত হোন না কেন, সেই পত্রিকা পাঠক কিনবে না বা সেই পোর্টালে কেউ ঢু মারবে না।
পত্রিকার নাম◾
পত্রিকার আকর্ষণীয় একটি নাম পেয়ে যাওয়া মানে পত্রিকার ব্রান্ডিংয়ের অর্ধেকই যেন করে ফেলা। নামটি ছোট, সংক্ষিপ্ত, অর্থবহ, ইউনিক এবং উচ্চারণে যাতে সহজ হয়, সে দিকে খেয়াল করতে হবে। পত্রিকার নামের কিন্তু অভাব নাই, সৃজনশীল সাংবাদিকের কাছে বহু বহু নাম থাকবার কথা। প্রচলিত সফল পত্রিকার নাম এদিক ওদিক করে নাম দিলে হবে না কিন্তু। সাবধান!
কর্মীদের যোগ্যতা◾
অন্য কোথাও চাকরি না পেয়ে ঠেকায় পড়ে যারা সাংবাদিকতায় আসেন তাদের মধ্যে সাংবাদিকতার প্রতি প্যাশন তৈরি হয় না। সাংবাদিকতার প্রতি প্যাশন যাদের আছে, সেরকম দক্ষ ও মেধাবী লোকবল নিতে হবে। এই প্যাশনের একটি বাংলা আমি করেছি, মুগ্ধতা বা প্রেম। এ পেশার প্রতি প্রেম না থাকলে না আসাই উচিৎ। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করা থাকলে ভালো হয়। তবে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে এ যুগে অনেক কিছুই জানা থাকতে হবে সাংবাদিককে। এমনকি প্রুফ রিডিংয়ের দক্ষতাও। এ ছাড়া বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে ফটোশপ, ইমেইলিং।
কনটেন্ট◾
কনটেন্ট হল পত্রিকার প্রাণ। এ যুগে ছাপা পত্রিকার বড় চ্যালেঞ্জ কনটেন্ট বাছাই। আগের দিনের ঘটনা পরেরদিন ছাপার অক্ষরে কিনে পড়তে টাকা খরচ করার মতো বোকা পাঠক কমই থাকার কথা। তাঁরা চাইবে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনুসন্ধান। ইনডেপথ রিপোর্টিং এ ক্ষেত্রে আসল দাওয়াই। এটা যারা যত বেশি দিতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে। সংবাদ যেমন ছাপাতে হয়। তেমনি অনেক সংবাদ চেপেও যেতে হয়। ভালো পত্রিকায় গসিপ ও অশ্লীল খবর ছাপা হয় না।
মেকআপ◾
কনটেন্ট জড়ো করা ও বাছাই করার পর পত্রিকার মেকআপের বিষয় চলে আসে। এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি পত্রিকার কনটেন্ট দুর্বল হওয়ার পরও শুধু মেকআপের মুন্সিয়ানা দিয়েও এ দেশে একটি পত্রিকা শীর্ষ স্থানীয় হবার গৌরব অর্জন করেছে। নিউজ পোর্টালের ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য। সাইটের ইউজার ইন্টারফেজ (ইউআই) যদি দারুণ হয়, সংবাদ উপস্থাপন যদি ক্যারিশম্যাটিক হয়, সহজেই তারা জনপ্রিয়তা পাবে।
ছবি ও ইলাস্ট্রেশন◾
ভাল পত্রিকার বড় বৈশিষ্ট এটি। ভাল ছবি, কার্টুন ও অলঙ্করণ অন্য পত্রিকা থেকে আলাদা করে দেয়।
সমালোচনা ও প্রশংসা◾
‘ব্যাড নিউজ ইজ গুড নিউজের’ যুগ এখন আর নেই। যদিও ওই ফর্মুলা এখনও কাজ করে। তবে এখন তার অতটা কার্যকারিতা নেই। সেই জায়গায় গঠনমূলক সমালোচনার একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। সমালোচনা ও প্রশংসা এ দুটোর ভারসাম্য রেখে কনটেন্ট পরিবেশন করতে হবে। শুধু প্রশংসা বা শুধু সমালোচনা— এ প্রবণতা পত্রিকার টেকসই সাফল্য আনে না এখন।
বিরোধীদল◾
মিডিয়াও বিরোধী দল। তবে তার জায়গা বিরোধী দলের কাতারে নয়। ভিন্ন একটি জায়গায়। ফলে সারাক্ষণ সরকারের প্রশংসায় ভাসলে সেই পত্রিকা খোদ সরকারি দলই পড়বে না। যেমনটা গত ১৫ বছর আমরা দেখেছি। আবার সারাক্ষণ সমালোচনা মুখর থাকলেও সেই পত্রিকা চলবে না। ইতিবাচক নিউজও দিতে হবে। মানুষ ত দিনশেষে একটু আশা চাইবে। কারণ, মানুষ আশায় বাঁচে।
আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি◾
এ যুগে মিডিয়ার ওপর বিশ্বাস এখন অনেকটাই কমে গেছে। এটি শুধু দেশেরই সমস্যা নয়, সারাবিশ্বেরই সমস্যা। তবে আমাদের দেশে বিশ্বাস হারাবার মাত্রাটা বেশি। অথচ এককালে পত্রিকায় ছাপা সংবাদ মানেই তাকে ‘বাইবেল’ জ্ঞানে বিশ্বাস করা হতো। এ বিশ্বাস থেকেই তৈরি হয় পাঠকের আস্থা ও ভালবাসা। তাই পাঠকের বিশ্বাস হারায়— এমন মিথ্যা ও বানোয়াট খবর পরিবেশ করা যাবে না।
নিজস্ব কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী তৈরি◾
কলাম এখন সাংবাদিকতার অন্যতম জনপ্রিয় একটি কনটেন্ট। কলাম পত্রিকার নিজস্ব হাউস থেকে লেখা হতে পারে, ফ্রিল্যান্সাররা লিখতে পারেন, পাশাপাশি লেখকদের একটি দলও হতে পারেন। সুপাঠ্য ও সমৃদ্ধ একটি কলাম কেবল পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণই করে না, এটি দীর্ঘ সময় ধরে পত্রিকার সুনাম ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ জন্য পরিকল্পিত পত্রিকাকে একটি কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী তৈরি করে নিতে হবে। তাদের প্রত্যেককে স্টার বানাতে হবে। এতে আখেরে পত্রিকারই লাভ হবে।
ইস্যু বা এজেন্ডা সেটিং◾
মিডিয়াকে আমি বলি হিরো ও ভিলেন বানানোর কারখানা। প্রভাবশালী মিডিয়া চাইলে কাউকে হিরো বা ভিলেন বানাতে পারে। মিডিয়ার উচিৎ ভালোকেই হিরো, এবং খারাপকে ভিলেন বানানো। দেশের জন্য কেউ ভালো কিছু করলে, কোনো একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার বা অর্জন করলে তাঁকে অসাধারণভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা । বিপরীত দিকে খারাপ চরিত্রকেও একইভাবে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা। শিশু ও নারীদের প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়াসহ এরকম তাদের মতো সমাজের পিছিয়ে পড়া নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে তুলে ধরা। ধংসাত্মক কাজ ও উগ্রবাদিতার প্রতি নেতিবাচক প্রচার চালানো মিডিয়ার নৈতিক দায়িত্ব।
হামলা ও মামলা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি রাখা◾
এ দেশে পত্রপত্রিকার স্বাধীনতার অবস্থা কোনোকালেই স্বস্তিকর ছিল না। পত্রিকার ওপর খড়্গহস্ত হলে হয়রানিমূলক মামলা, বিজ্ঞাপন বন্ধে চাপ সৃষ্টি এবং অপপ্রচার নিয়মিত একটি বিষয়। তাই একটি আইনজীবী প্যানেলের সাথে সার্বিক যোগাযোগ রাখা।
উপরে উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় মিডিয়ার জনপ্রিয়তা নিশ্চিতভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে। জনপ্রিয়তা ও ব্রান্ডভ্যালু বাড়লে অটোমেটিক বাড়বে তার গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা। এই বিশ্বাসযোগ্যতাই হল মিডিয়ার প্রাণ। এটি যখন অর্জিত হবে তখন বিজ্ঞাপনসহ নানা বাণিজ্যিক সাফল্যও আসবে। তখন হাসবে গোটা পত্রিকা পরিবারই। সবার বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধাও তখন বাড়বে। সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরাও আর ভিন্ন মিডিয়ার দিকে ছুটবেন না। বা অনৈতিক অর্থকড়ির দিকেও ছুটবেন না তারা।
এত কথা লিখলাম এ কারণে যে, সাংবাদিকতা সহজ কোনো কাজ নয়। তবুও এ দেশে নতুন মিডিয়া আসুক, ভাল করুক। দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখুক। মিডিয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাক। এ পেশাকে যাঁরা সত্যিকার অর্থে ভালবাসেন, তাঁদের চর্চার জায়গাটা থাকুক। কারণ, সাংবাদিকতাই যে তাঁদের প্রাণ।
আসাদ ঠাকুর, কবি, লেখক ও সাংবাদিক
দ.ক.সিআর—২৪