বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে নবম শতাব্দীতে চর্যাপদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য ও কবিতার যাত্রা শুরু হলেও মূলত অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হয় বাংলা কবিতা। চতুর্দশ বা পঞ্চদশ শতকে শাহ মুহম্মদ সগীরের প্রণোয়পখ্যান “ইউসুফ জোলেখা” জৌলুস সৃষ্টি করলেও আটারো শতকেই ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কিছুপরে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কবিতাকে এক সঞ্জীবনী মহিমায় অলংকৃত করেন। এরপরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদদীন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ দাশের হাতে কবিতা পেয়েছে এক অপূর্ব পূর্ণতা। মাত্র দুই শতাব্দীর ব্যবধানে বাংলা কবিতা আজ বিশ্ব সাহিত্যের সুউচ্চ আসনে অধিষ্টিত।
শতবর্ষপূর্বে যখন রবীন্দ্রনাথ প্রচন্ড প্রভাব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের জয়মাল্য গেঁথে চলেছেন ঠিক তখনই এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য নিয়ে আবির্ভূত হলেন কবি নজরুল। নজরুলের এ আবির্ভাবকে রবীন্দ্রনাথ স্বাগত জানালেন। অপার সম্ভাবনাময়ী তরুন নজরুলকে বললেন- “দ্যাখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলী বা কীটসের মতো বড় একটা ট্রাজেডি আছে, তুই প্রস্তুত হ।” নজরুল শুধু কাব্যেই বিপ্লব ঘটাননি পরাধীনতার অর্গল ভাঙ্গতে বাজিয়েছেন অগ্নীবীনাও। একই সময়ে জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনে মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন বাংলার মুখ। জসীম উদদীন পল্লীর সৌন্দর্যকে কবিতায় নিয়ে এসেছেন আকর্ষনীয় কলরবে। এছাড়াও ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ কবিগণ বাংলা কবিতাকে করেছেন আরো সমৃদ্ধ, আরো স্বকীয়।
খোয়াই নদী বিধৌত হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে সাহিত্য চর্চার পটভূমি নতুন নয়। চা বাগান আর সবুজ বনানী পরিবেষ্টিত প্রাচীন এ জনপদেই জন্মেছেন উপমহাদেশের বরেণ্য গীতিকবি হেমাঙ্গ বিশ্বাস, দিনেশ রঞ্জন নাথ, মোঃ আব্দুল মোছাব্বির ইবনে হাবীব, মুহম্মদ আবুল বশীর বাঙ্গাল, একে শেরাম প্রমুখ প্রতিথযশা কবিগণ। এখানে কবিতা চর্চার রেওয়াজ পুরনো হলেও কবিদের কোন প্রথম সংগঠন “চুনারুঘাট কবি পরিষদ” নামে আত্মপ্রকাশ করে জুলাই ২০১৬ খ্রীষ্টাব্দে। যার মুখপত্র “এগারো’র কবিতা”। এ গ্রন্থে কমিটির এগারো জন সদস্যের পরিচিতিসহ তিনটি করে কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা কমিটির পরিচিতিও তুলে ধরেছি। অনলাইন ভিত্তিক কাব্যের অপচর্চার যুগে অপচর্চা ও অপসংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে চুনারুঘাটে শুদ্ধ কবিতার চর্চা আরো গতিশীল হবে বলে বিশ্বাস করি।
“এগারো’র কবিতা” পাঠক হৃদয়ে স্থান পেলেই দীর্ঘদিনের এ পরিশ্রমকে সার্থক মনে করবো। এগিয়ে যাক আমাদের বাংলা সাহিত্য, বিশ্ব সাহিত্যে বাংলা কাব্য আরো মাহাত্ম্যপূর্ণ হোক এবং দীর্ঘজীবী হোক “চুনারুঘাট কবি পরিষদ” এই প্রত্যাশা আজন্মের।
চুনারুঘাট কবি পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ এই সময়ে দেশে-বিদেশে যারা বাংলা কবিতা চর্চায় ব্রতী রয়েছেন সকলের সাফল্যমন্ডিত বিচরণে আবহমান বাংলা কাব্যমন্ডল আরো অনন্য উচ্চতায় স্থান করে নিবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এড: মহিবুর রহমান জিতু, সাধারণ সম্পাদক, চুনারুঘাট কবি পরিষদ
দ.ক.সিআর-২৪