সাজ্জাদ হোসেন◾
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কর্মকর্তারা ডাকাতি ও খুনের মামলায় তদন্তের জন্য পান ৬ হাজার টাকা করে। অপহরণ ও মানবপাচার মামলায় পান ৫ হাজার টাকা। দস্যুতা ও অপমৃত্যু মামলায় ৪ হাজার, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পান ২ হাজার টাকা করে।
এসিড সংক্রান্ত মামলা, দ্রুত বিচার আইনের মামলা, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত মামলা ও মানি লন্ডারিং মামলা তদন্তে ৩ হাজার টাকা পান তদন্ত কর্মকর্তা। এরমধ্যে অর্ধেক পাওয়া যায় তদন্তের শুরুতে। বাকিটা চার্জশিট দেওয়ার পর।
তদন্ত কর্মকর্তাকে এই টাকা দিয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আসামি গ্রেপ্তার, ফোর্সসহ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা বাবদ গাড়ি ভাড়া (সরকারি গাড়ি ব্যতিত) ও অন্যান্য ব্যয় বহন করতে হয়।
এই বরাদ্দ থেকেই মামলার নথিপত্র প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের কপি, মৃতদেহের ছবি তোলা (ভিডিও ও স্থির চিত্র), ভিসেরা প্রেরণ, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ এবং কোর্টে আলামতসহ চার্জশিট/ফাইনাল রিপোর্ট পাঠানো, নারী ভিকটিমকে আদালতে/হাসপাতালে আনা নেওয়ার খরচও করতে হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন—
মামলার তদন্ত কাজের খরচ বাদীর কাছ থেকে নেওয়ার আইনগত কোনও সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলছেন, এর কোনও আইনগত ভিত্তি নেই।
এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুকের মতে, “পুলিশ বাহিনীর জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। তদন্ত কর্মকর্তা যখন অভিযানে যায়, তার জন্য মোটরসাইকেলের কিংবা গাড়ির জ্বালানি ও খরচ কিছুই বরাদ্দ থাকে না। তদন্ত কর্মকর্তাকে নিজে উদ্যোগ নিয়ে সব ব্যবস্থা করতে হয়। এজন্য অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে বাধ্য হয়ে খরচের জন্য বাদীকে ম্যানেজ করতে হয়। এটাতো হতে পারে না। তদন্ত কাজে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এতে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই খরচ যোগানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তদন্ত কাজের জন্য প্রণোদনা সঠিকভাবে দিলে পুলিশের দুর্নীতি কমবে। বাদীর সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। আমরা খুব জলদিই এসব নিয়ে কাজ শুরু করব। এসব জায়গায় পরিবর্তন না আনতে পারলে আমরা কখনও কাঙিক্ষত পুলিশ পাব না।”
দ.ক.সিআর-২৪