সাজ্জাদ হোসেন◾
নওগাঁ সদর উপজেলার বাসিন্দা আব্দুস সালামের ১২ বছর বয়সী ছেলে রাগ করে বাসা থেকে চলে গিয়েছিল ৫ মাস আগে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও ছেলেকে না পেয়ে নওগাঁ সদর থানায় জিডি করেন তিনি। এরপর সালামের ছেলের খোঁজ মেলে মানিকগঞ্জে। তাকে উদ্ধারে পুলিশকে ১৪ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে দিতে হয়।
সালাম বলেন, “শুধু গাড়ি ভাড়া নয়, পথে পুলিশ সদস্যদের খাওয়াদাওয়া, এমনকি সেতুর টোলের টাকাও আমাকে দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে সন্তানকে উদ্ধারে পুলিশের পেছনে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হয়েছে।”
কী বলছে পুলিশ-
মামলা তদন্তে বাহিনী থেকে যে পরিমাণ খরচ পাওয়া যায় তা দিয়ে আসলে কিছুই হয় না। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়েই ভুক্তভোগীর কাছে ধর্ণা দিতে হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে”- এভাবেই মামলার তদন্ত কাজের খরচ নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন উপপরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা।
নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক মামলা তদন্তের জন্য দীর্ঘ সময় লেগে থাকতে হয়। বিভিন্ন স্থানে যেতে হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে। একটি হত্যা মামলার তদন্তের জন্য একবার নিজের থানা থেকে অনেক দূরে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে আমাকে ৬ দিন থাকতে হয়েছিল। সেই কাজে আমার সঙ্গে দুই কনস্টেবলও ছিলেন। সেই ৬ দিনে আমার খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু সেই কাজে আমি টিএডিএ বিল পেয়েছিলাম মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকা।”
উপপরিদর্শক পদপর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, “মামলার কাজে নিজের থানা এলাকার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় শ্রেণির একজন কর্মকর্তা একদিনে সব মিলিয়ে ৮৭৫ টাকা টিএডিএ বিল পান। আর প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা পান ৯৫০ টাকার মতো। এই সময়ে এই টাকা দিয়ে কোথাও যাতায়াত, তিন বেলা খাওয়া আর রাতে থাকার ব্যবস্থা কীভাবে হবে? আর সেই বিল পাওয়ার জন্যও ৩-৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়।”
বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মামলার তদন্ত শেষ হলে নামমাত্র একটি বরাদ্দ পান তদন্ত কর্মকর্তারা। এই সামান্য পরিমাণ টাকা দিয়ে কোনোভাবেই মামলার তদন্ত কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আর একজন পুলিশ সদস্য যে পরিমাণ বেতন পান সেখান থেকে যদি তদন্ত কাজের পেছনে খরচ করেন, তাহলে ওই কর্মকর্তাকে মাস শেষে শূন্য পকেটে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই মামলার তদন্তে পুলিশের সফলতা বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় লসিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার বিকল্প নেই।
“দেশের থানাগুলোতে এমনিতেই যানবাহন সঙ্কট। আর যেসব গাড়ি থানায় থাকে, সেগুলো লক্কড়ঝক্কর। এসব গাড়ি দিয়ে শুধু থানা এলাকায় পেট্রোল ডিউটি দেওয়া যায়, দূরপাল্লার যাত্রা সম্ভব নয়। তাই মামলার তদন্ত কাজে যদি নিজের থানা এলাকার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে বাদীর কাছ থেকে সাপোর্ট নেওয়া ছাড়া সম্ভব নয়।”
এই তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, “অনেক মামলাতেই দেখা যায়, বাদী অনেক গরিব। তাদের কাছ থেকে খরচ নেওয়া সম্ভব হয় না। আবার ডাকাতি কিংবা চুরির মামলা হলেও বাদীকে ছাড় দেওয়া হয়। কারণ তারা এমনিতেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। এমন সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে নিজের পকেটের টাকা খরচ করতে হয় বাধ্য হয়ে।”
এ বিষয়ে পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে জানা যায়, “মামলার তদন্ত কাজের খরচ কোনোভাবেই বাদীর কাছ থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি মামলার তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট বিল পান তদন্ত কর্মকর্তা। আগে সেটি কম থাকলেও ২০২১ সালে বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত টিএডিএ বিল পান তারা।”
দ.ক.সিআর-২৪