এদেশে ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-মুসলিম একসাথে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে বেশকিছু জায়গায় অভিন্নতা থাকলেও ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে দুটি সম্প্রদায় সম্পূর্ণ আলাদা ও ব্যতিক্রম।
বাংলাদেশে হিন্দু মুসলিমের যেমন গৌরবময় সামাজিক সম্প্রীতির ইতিহাস রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই সম্প্রীতিতে বার বার আঘাত হানার চেষ্টাও করা হয়েছে। সম্ভবত এই একটি কারণেই তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনে আলাদা নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়ে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নির্বিঘ্নে তাদের অনুষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে পারে না।
এখন আসি মূল কথায়; যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাংলাদেশের এই বাস্তবতায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় আমাদের দায়িত্ব কতটুকু তা আগে জানা দরকার। যারা জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, এবং রাজনৈতিক দলের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের অবশ্যই হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখা আপনাকে মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন, পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গেলে তাদের মূল উপাসনালয়ে না ঢুকে বাহিরে যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেখানে বসা, এবং পূজা কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে আলাপ করে তাদের খোঁজ খবর নেয়া। সবচেয়ে ভালো হয় আগে থেকেই মন্দির কর্তৃপক্ষের নিকট সময় নির্ধারণ করে যাওয়া। তাদের সাহায্যে আপনি প্রস্তুত আছেন এটা অবগত করা। অতিরিক্ত আতিথেয়তা পেতে তাদের বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলে যথাসম্ভব দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করা।
আপনি মানুন, আর না মানুন; কোনো হিন্দুই চান না অন্য ধর্মের লোক হয়ে আপনি তাদের উপাসনার কাজে ব্যাঘাত ঘটান এবং দীর্ঘসময় ধরে সেখানে অবস্থান করুন। আপনার ঈদমাঠে হিন্দুরা বসে থাকলে আপনিও যেমন স্বস্তিবোধ করবেন না, তাদের ক্ষেত্রেও তাই।
পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা প্রদানে মূল দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, জনগণের নয়। কাজেই নিরাপত্তার নামে ইসলামী বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে মণ্ডপের সামনে আপনার দাড়িয়ে থাকা তাদের জন্য চরম পর্যায়ের বিরক্তিকর অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না।
আমরা জেনেশুনেই হিন্দুদের দোকান থেকে বাজার করি, তাদের বাড়িতে দাওয়াত খাই। এগুলো সবই ইসলামে বৈধ। কিন্তু তাদের উপাসনালয়ে গিয়ে ইসলামি পোষাক পরিধান করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি মনস্তাত্ত্বিক আঘাত করবেন এটা ইসলামে বৈধ নয়। এখানে আপনাকে সীমারেখা টানতে হবে। পূজামণ্ডপের স্টেজে ইসলামি সঙ্গীত গাওয়া গোয়ার্তমি ছাড়া আর কিছুই না। এটিও ভিন্নধর্মী মানুষের কাছে ইস সম্পর্কে ভুল বার্তা দিবে।
এদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছে না যে আপনি দলবেঁধে গিয়ে মন্দির পাহারা দিবেন। উদ্দেশ্য সৎ থাকার পরেও আচরণের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত প্রদর্শনী এবং কমনসেন্সের অভাব এই নিরাপত্তা ও সহমর্মিতার মনোভাবকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করবে। দিনশেষে ফলাফল আসবে শূন্য! সুতরাং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এর সীমারেখার বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের কারো নেই।
মোহাম্মদ সুমন
শিল্পসংস্কৃতি ও মিডিয়াকর্মী
দ.ক.মতামত