মোহাম্মদ সুমন◾
১৮ কোটি মানুষের দেশে এখন আর কেউ কৃষক হতে চাইছে না। তাহলে কৃষি পণ্যের দাম হাতের নাগালে আসবে কীভাবে? গ্রাম্য গৃহস্থের সংখ্যা হতাশাজনক ভাবে কমতে থাকায় দেশীয় শাক-সবজির বীজ আর কেউ সংরক্ষণ করছে না। ফলে দেশীয় নিরাপদ জাতগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
উচ্চ ফলনের দোহাই দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশ থেকে বীজ আসা শুরু হয়েছিল দেশে, আজ ফসলের বীজের নিয়ন্ত্রণ সিনজেনটা সহ বিদেশি কোম্পানিরগুলোর হাতে! সার, কীটনাশকও তারাই দিচ্ছে। জৈব সারের জোগান ও ব্যবহার কমে যাওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদনে বেড়েছে রাসায়নিকের প্রভাব। এতে করে খাদ্যমূল্য এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি দুটোই বেড়েছে সমানতালে।
একসময় মাছ-মাংস, সবজি ও ডিমের চাহিদা মানুষ পারিবারিক কৃষি খামার থেকেই মিটাতো। সব পরিবারেই কমবেশি এই ব্যবস্থা ছিলো। বর্তমানে তা ভেঙে পড়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাছ-মাংস, হাইব্রিড সবজি এবং ব্রয়লার মুরগির ডিমের প্রতি মানুষ এখন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক চাষ উন্নত দেশেও হয়। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে নীতিমালা আছে, সেসব দেশে বাজার সিন্ডিকেট থাকেনা। আমাদের দেশে নীতিমালার অভাব, কীটনাশকের অপপ্রয়োগ এবং বাজার সিন্ডিকেট একটি অন্যতম বড় সমস্যা।
বীজ আইন-২০১৮ অনুযায়ি বীজ আমদানিতে নির্দিষ্ট মানদণ্ড, আমদানীর উদ্দেশ্য এবং পরিমাণ নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে তা কেউ মানছে না। মানহীন বীজ কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক। শতশত অভিযোগ থাকার পরেও অভিযুক্ত আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প এখন পুরোপুরি আফতাব, নারিশ, প্রাণ আরএফএলের মতো কোম্পানগুলোর কাছে জিম্মি। তারাই দেশব্যাপী কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং বাজারদর নির্ধারণ করছে। বিগত ১৫ বছরে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, স্কয়ার ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। চাইলেই রাতারাতি এই ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নেই। একমাত্র রাষ্ট্রই পারে কঠোর হস্তে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে।
শুধু সিন্ডিকেট ভাঙলেই চলবে না, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে দ্রুত কাজ শুরু করে দিতে হবে। প্রকৃত কৃষক যেন সার, বীজ ও ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বুঝে পায় সেদিকে কঠোর নজরদারি তৈরি করতে হবে। কৃষিতে রাষ্ট্রীয় বাজেট বাড়াতে হবে। কৃষিকে স্মার্ট ও যুগোপযোগি করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃষিকাজে সংশ্লিষ্ট লোকদেরকে মূল্যায়ণের মাধ্যমে এ কাজে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। পারিবারিক কৃষি খামারের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একমাত্র পারিবারিক কৃষিই পারে খাদ্য সংকট এবং দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে।
এখনই কৃষিতে গুরুত্ব না দিলে ১৮ কোটি মানুষের দেশে ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন হবে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ একসময় সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। তখন আর কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসবে না।
দ.ক.কলাম.সুমন