1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন

গণতন্ত্রহীন উন্নয়ন সম্ভব কি; মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

ক্ষমতাসীনরা আজকাল যে শব্দটি উচ্চারণ করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে থাকেন বলে মনে হয়- সেটি হলো ‘উন্নয়ন’। কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে, কী ভাবে ও কী পরিমানে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের ‘উন্নয়ন’ ঘটিয়ে চলেছে তার ফিরিস্ত্মি দিতে তারা পাগলপ্রায়। তাদের সদম্ভ দাবি- একমাত্র তারাই ‘উন্নয়নের রাজনীতি’ চর্চা করছে।

 

ক্ষমতাসীনদের এই ঢোল পেটানো ‘উন্নয়নের’ মডেল কতোটা আপামর জনগণের স্বার্থে, আর কতোটা মুষ্টিমেয় লুটেরা বিত্তবানদের স্বার্থে পরিচালিত সে প্রশ্ন তোলা হলে, তারা সাধারণত একটি যুক্তিই হাজির করে থাকে। তা হলো, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে বিপুল সম্পদ জমা হওয়াটা ‘উন্নয়ন’ প্রক্রিয়ারই একটি ধাপ। কিছু লোকের হাতে টাকার পাহাড় জমা হওয়ায় দোষের কিছু নেই, বরং এটিই সব মানুষের কাছে সম্পদ পৌঁছে দেয়ার একটি ‘উৎকৃষ্ট মাধ্যম’। বিত্তবানদের হাতে জমা হওয়া এই বিপুল সম্পদের কিছু অংশ ‘চুইয়ে পড়ে’ গরিব মানুষের কাছে কোনো এক সময় তো পৌঁছাবেই। তাই, চিন্ত্মা কী! অর্থাৎ, ক্ষমতাসীনদের ‘উন্নয়নের’ সার কথা হলো- কিছু মানুষের হাতে সম্পদ তুলে দেয়া, আর তারপর ব্যাপক জনগণের জন্য সেসবের ‘চুইয়ে পড়া’ উচ্ছিষ্টের ব্যবস্থা করা। ব্যাপারটি অনেকটা এমন যে,- ঘোড়াগুলো খাবার গ্রহণ করবে, আর তার তাগড়া শরীর থেকে ‘চুইয়ে পড়া’ মল-মূত্র হাতে পেয়ে ৯৯ শতাংশ মানুষকে সন্ত্মষ্ট থাকতে হবে! এটিই হলো ক্ষমতাসীনদের ‘উন্নয়ন’ স্ট্র্যাটাজির মর্মকথা।

 

ক্ষমতাসীনরা ‘উন্নয়ন’ নিয়ে কথা বলতে বলতে আজকাল মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। কিন্তু তাদের ‘উন্নয়নের’ শ্রেণি চরিত্র কী, শ্রেণি বিভক্ত এই সমাজের কোন অংশের মানুষের কাছে কী অনুপাতে এই ‘উন্নয়নের’ ফসল জমা হবে, বৈশ্বিক কিংবা আভ্যন্ত্মরীন নানা ধরণের নৈরাজ্যপূর্ণ তাল-মাতাল বাস্ত্মবতার প্রেক্ষাপটে এরূপ ‘উন্নয়নের’ ধারা কতোটা টেকসই বলে বিবেচিত হতে পারে, এ ধরনের ‘উন্নয়ন’ ধারার অভিঘাতে সৃষ্ট ক্রমবর্দ্ধমান শ্রেণি-বৈষম্য ও ধন-বৈষম্য দেশকে কী ধরনের বিস্ফোরণমুখ সামাজিক সংঘাতের দিকে ধাবিত করবে, প্রকৃতি-পরিবেশ-জীব বৈচিত্র- প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে তা কী ধরনের মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে- এসব গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ক্ষমতাসীন ‘উন্নয়নপন্থীরা’ প্রায় নিশ্চুপ। তারা যা ঘটাচ্ছে সেটি আসলে ‘উন্নয়ন’ নয়। প্রকৃত সত্য হলো, তাদের এই ‘উন্নয়ন’ হচ্ছে সমাজের বুকে ‘মহাবিপর্যয়ের’ টাইম বোমা স্থাপনের মতো একটি ভয়াবহ কাজ। মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনিকদের হাত ধরে ও তাদের উপর নির্ভর করে তথাকথিত ‘উন্নয়নের’ অন্ধকার গলির যে পথ ধরে তারা অন্ধের মতো চলছে, তা মোটেও কোনো প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবে না।

 

দেশে এখন লুটেরা ধনিক শ্রেণি ক্ষমতাসীন। যারাই ক্ষমতায় আসছে তারাই রাতারাতি লুটেরা বনে যাচ্ছে। আবার, যারা লুটপাট করে বিত্তবান হচ্ছে তারাই ক্ষমতার মসনদে স্থান করে নিচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র তথা আমলাতন্ত্র এই ক্ষমতাসীন লুটেরাদের স্বার্থই রক্ষা করছে। আবার, সেই আমলাতন্ত্রের ভেতর থেকেও লুটেরা ধনিক জন্ম নিচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা, লুটপাট, আমলাতন্ত্র- দেশে এখন এই তিন শক্তির একটি ঘোটচক্র গড়ে উঠেছে। বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের স্বার্থের পাহাড়াদার সাম্রাজ্যবাদী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তাদেরকে মদদ দিচ্ছে। দেশী ও বিদেশীদের মধ্যে লুটপাটের সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা চলছে। দেশ আটকা পড়ে গেছে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবস্থাগত বেড়াজালে। এদেশের ক্ষমতাসীনদের ‘উন্নয়ন’ ধারা মূলত: শোষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেই অর্থ-বিত্ত সরবরাহ করে চলেছে। দেশের লুটেরা ধনিকরাও লুটপাটের কিছুটা ভাগ পাচ্ছে। কিন্তু পুঁজিবাদের ‘অসম বিকাশের সূত্র’ কার্যকর হওয়ায় ধনী দেশগুলো লাভবান হচ্ছে বেশি। ফলে আন্ত্মর্জাতিক পরিসরে বৈষম্য বাড়ছে। এসবই হলো ক্ষমতাসীনদের ‘উন্নয়নের’ ফলাফল। তার পরেও তারা এটিকেই ‘উন্নয়ন’ বলে আখ্যায়িত করে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে চলেছে।

 

‘উন্নয়ন’-এর নামে প্রোপাগান্ডার জজবা সৃষ্টি করাটা নতুন কিছু নয়। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকরাও একসময় অনেকটা এভাবেই তাদের ঔপনিবেশিক ‘উন্নয়নের’ প্রশস্ত্মি গেয়ে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে। ব্রিটিশদের প্রচারণা ছিল- রেলপথ, শিক্ষা ব্যবস্থা, আধুনিক প্রশাসন, শহর-বন্দর নির্মাণ- কতো, কিছুই না তারা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা তারা এদেশকে মধ্যযুগীয় ‘অসভ্যতা’ ও ‘বর্বরতা’ থেকে মুক্ত করে এদেশে ‘সভ্যতা’ নিয়ে এসেছে। তাদের ভাষায় এদেশ ছিল ‘সাদা মানুষের বোঝা (ধ যিরঃব সধহ’ং নঁৎফবহ)’। কিন্তু কোনো জাতি যদি পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকে তাহলে তার প্রকৃত উন্নয়ন কখনই সম্ভব হয় না। পরাধীনতা ও উন্নয়ন পরস্পরের বিরোধী। স্বাধীনতাহীনতায় উন্নয়নের সম্ভাবনাকে কখনই পূর্ণভাবে রূপায়িত করা যায় না। ফলে বিলেতি শাসকদের শাসন প্রকৃত ‘উন্নয়ন’ ছিল না। তারা এদেশে শাসক হিসেবে অভির্ভূত না হলে, স্বাধীন ঐতিহাসিক বিকাশ রম্নদ্ধ না হলে, এদেশের যে আরো অনেক দ্রম্নত গতিতেও সর্বাঙ্গীনভাবে বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, অধিকাংশ বিজ্ঞজন সে বিষয়ে একমত। ব্রিটিশ আমলের ‘উন্নয়ন’ আসলে উন্নয়ন ছিল না। চূড়ান্ত্ম বিচারে তা ছিল, তুলনামূলক বিচারে, উন্নয়নের পথ রম্নদ্ধ করার একটি পশ্চাদমুখী পদক্ষেপ।

 

পাকিস্ত্মানের আইউব- মোনায়েমি শাসনামলেও ‘উন্নয়ন’ নিয়ে প্রোপাগান্ডা কম হয়নি। আইউবী শাসনের দশ বছরে তারা ‘পূর্ব-পাকিস্ত্মানে’ যে সব উন্নয়ন কাজ করেছিল তা নিয়ে প্রচারণার শেষ ছিল না। একথা ঠিক যে অনেক ‘উন্নয়ন’ সে সময় হয়েছিল বটে। ১৯৬৮ সালের শেষ দিকে চোখ ধাঁধানো সব অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে আইউবের ‘উন্নয়নের এক দশক’ পালন করা হয়েছিল। কিন্তু এসব প্রোপাগান্ডায় সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করা যায়নি। কারণ আইউবী ‘উন্নয়ন’ জন্ম দিয়েছিল বৈষম্যের। ২২ পরিবারের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। তারই কিছু চুইয়ে পড়ে উচ্ছিষ্ঠরূপে পৌঁছেছিল সাধারণ মানুষের ঘরে। তার পাশাপাশি ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও পাকিস্ত্মানী শোষক শ্রেণির জাতিগত শোষণ। এর ফলে পূর্ব বাংলার সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছিল আমেরিকায়, ইউরোপে, পাঞ্জাবে। আমাদের পক্ষে এ ধরনের জাতিগত শোষণ না থাকলে আইউবী আমলের ‘উন্নয়নের’ চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো।

 

এর সাথে ছিল আইউব খানের একনায়কত্ব, স্বৈরশাসন ও গণতন্ত্রহীনতা। মানুষ চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী জন্তুর মতো শুধু ‘ভাত খেয়ে’ বাঁচতে চায় না। সে স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে, অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়। রাজনীতির ক্ষেত্রেও সে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে চায়। গণতন্ত্রহীন ‘উন্নয়ন’ মানুষের কাছে তেতো ওষুধের মতো। তাতে পেট ভরলেও মন ভরে না। আসলে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাঝে সম্পর্কটা এমনই যে গণতন্ত্রহীন ‘উন্নয়নে’ যেমন মন ভরবে না, পেটও তেমনি ভরবে না। ফলে আইউবী শাসনামলের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত্ম এটিই দেখা গেল যে মহা ধুমধামে চোখ ধাঁধানো ‘উন্নয়নের এক দশক’ পালন করার তিন মাসের মধ্যে দেশে আইউব খানের ‘উন্নয়নের’ রাজত্বের বিরম্নদ্ধে গণঅভ্যূত্থান ঘটে গেল। আরও তিন মাসের মধ্যে আইউব শাহীর পতন হলো।

 

এদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে আজকাল যুক্তি দেয়া হচ্ছে যে গণতন্ত্রের চেয়ে ‘উন্নয়ন’ বেশি গুরম্নত্বপূর্ণ। সে কারণে ‘উন্নয়নের’ প্রয়োজনে গণতন্ত্রকে কাট্-ছাট্ করলে বা তা বিসর্জন দিলেও কোনো ক্ষতির কিছু নেই। গণতন্ত্রের এ্যাজেন্ডাকে আপাতত: সাময়িকভাবে কিছুটা বা সর্বোতভাবে পেন্ডিং রেখে আগে ‘উন্নয়ন’ করে নেয়া উচিৎ। মালায়েশিয়ার মহাথীরের মতো পথ অনুসরণ করতে পারলে আমরা ‘উন্নত’ দেশ হয়ে উঠতে পারবো।

 

অগ্রাধিকারযোগ্য ‘উন্নয়নের’ কাজ এগিয়ে নেয়ার পর, পরবর্তীকালে কোনো উপযুক্ত সময়ে গণতন্ত্রের এ্যাজেন্ডার প্রতি নজর দেয়া যাবে। ক্ষমতাসীনরা এসব যুক্তিকে ভিত্তি করে একটি তাত্ত্বিক অবস্থান নির্মাণ করেছে। সেই তত্ত্বকে এখন তারা বেশ জোরে-শোরে ফেরি করতে শুরম্ন করেছে। গণতন্ত্রহীন ‘উন্নয়নের’ এই তত্ত্ব কেবল ভ্রান্ত্ম ও অগ্রহণযোগ্যই নয়, তা নিষ্ফল ও বটে। এই তত্ত্ব অনুসরণ করে চললে গণতন্ত্র তো পাওয়া যাবেই না, এতে দেশের কোনো প্রকৃত উন্নয়নও ঘটবে না। অর্থাৎ, এই তত্ত্ব অনুসরণ করে চললে ‘আমও যাবে, ছালাও যাবে’।

 

এ ক্ষেত্রে প্রথম কথা হলো, প্রকৃত উন্নয়ন কেবল বৈষয়িক সম্পদের সমাহারের হিসেব দিয়েই নির্ধারণ করা যায় না। প্রকৃত উন্নয়নের মর্মকথা হলো মানুষের জীবনের গুন-মান (ছঁধষরঃু ড়ভ ষরভব)। এক্ষেত্রে শিক্ষা, সংস্কৃতি সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবেশ-প্রকৃতির শুভ্রতা ও ভারসাম্য ইত্যাদি খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ উপাদান। একজন অধিকারহীন, শৃংঙ্খলিত ও পদানত মানুষকে বৈষয়িকভাবে যতো ‘সুখে’ থাকার ব্যবস্থাই করা হোক না কেন, তাতে সে নিজেকে উন্নত জীবনের অধিকারী হিসেবে কখনোই ভাববে না। কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের ‘দুই পাখি’ কবিতাটি এ প্রসঙ্গে খুবই প্রণিধানযোগ্য। সোনার খাঁচায় বাস করা ‘খাঁচার পাখি’ ও স্বাধীনভাবে বনে বনে উড়ে বেড়ানো ‘বনের পাখির’ মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথনকে ভিত্তি করে কবি তার এই কবিতাটি রচনা করেছেন। পাঠক যদি আরেকবার কবিতাটি কষ্ট করে পড়ে নেন তাহলে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের, তথা সুখ ও স্বাধীনতার পারস্পরিক যোগসূত্রের বিষয়টি তার কাছে বেশ স্পষ্ট হবে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের উপস্থিতি প্রকৃত উন্নয়নের একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। এটি কেবল হালকা কোনো কথার কথা নয়।

 

এক্ষেত্রে দ্বিতীয় কথাটি হলো, সব মানুষের জন্য বৈষয়িক ক্ষেত্রে ‘উন্নয়ন’ নিশ্চিত করার বিষয়টিকেও যদি পৃথক ভাবে বিবেচনা করা হয় তাহলেও বলতে হয় যে, গণতন্ত্রকে ভিত্তি করে অগ্রসর হওয়া ব্যাতীত তা সম্ভব হতে পারে না। ইতিহাস ও সমসাময়িক ঘটনাবলীর শিক্ষা হলো, অর্থনৈতিক ক্ষমতাই রাজনৈতিক ক্ষমতার নির্ধারক। আর্থিক ক্ষমতাবানরাই তাদের আর্থিক শক্তির জোরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হতে সক্ষম হয়। কেবল গণতন্ত্রের চর্চাই এই সমীকরণকে বদলাতে পারে। কারণ, গণতন্ত্রের মর্মকথা হলো- আমির-ফকির নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।

 

নাগরিকদের মধ্যে সংখ্যায় ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, মেহনতি মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণ। তাদের অর্থনৈতিক দূর্বলতা তাদেরকে সাধারণ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করে। কিন্তু গণতন্ত্রে তাদের যে অধিকার থাকার কথা তার চর্চা নিশ্চিত হলে এই অবস্থার বিপরীতমুখী ফলাফলের প্রক্রিয়া সূচনা করা সম্ভব হয়। আপামর জনগণ যদি সচেতনভাবে গণতন্ত্র প্রদত্ত তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় তাহলে অর্থনৈতিক শক্তি দুর্বল থাকা সত্ত্বেও তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব করে তুলতে সক্ষম হতে পারে।

 

রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের দ্বারাই নির্ধারিত হয় ‘উন্নয়নের’ শ্রেণি চরিত্র ও অভিমুখীনতা। গণতন্ত্রকে পেন্ডিং রেখে ‘আগে’ উন্নয়ন নিশ্চিত (!) করার পথ গ্রহণ করলে রাজনীতিতে বিত্তবানদের আধিপত্ব অটুট থাকাটা নিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফলে ‘উন্নয়নের’ সেই ধারার অনুসরণই অবধারিত হয়ে উঠবে যে ধারা ধনীকে আরও ধনী করার ও মুষ্ঠিমেয় লুটেরাদের হাতে দেশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার সুযোগ করে দেবে। সেই ‘উন্নয়নের’ সামান্য ছিটে-ফোটাই কেবল এসে পৌঁছাবে গরিব মানুষের ঘরে। লুটপাটের অর্থনীতির জন্য উপযোগী হলো গণতন্ত্রহীনতা। আর গণতন্ত্র হলো লুটপাটের ব্যবস্থার জন্য বিড়ম্বনা ও অন্ত্মরায়।

 

তাই একথা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, গণতন্ত্রকে কাট্ ছাট্ করে যে কোনো ধরনের উন্নয়নের পথ ধরে অগ্রসর হওয়ার তত্ত্ব হলো- প্রকৃতপক্ষে লুটপাটের অর্থনীতি চালু রাখার ও দেশী-বিদেশী লুটেরা ধনিকদের স্বার্থ রক্ষার একটি প্রতিক্রিয়াশীল তত্ত্ব।

 

লেখক: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি, কমিনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ

 

দ.ক.কলাম

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট