➖
আসাদ ঠাকুর◾
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনভূমিও এটি।
প্রায় ১,৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমি বিস্তার লাভ করতে শুরু করে ১৯৪০ সালের দিকে। তবে রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বনটি সম্প্রসারণ করা হয়।
সিলেট বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ি আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ির বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য গঠিত।
এই অভয়ারণ্যে আছে প্রায় ১৬৫ প্রজাতির নানান পাখি। উল্লেখযোগ্য পাখি হলো ভিমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙ্গা, ঈগল, চিল ইত্যাদি।
প্রানীদের মধ্যে আছে বিরল পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি, মুখপোড়া হনুমান আর বিরল উল্লুকও আছে। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে কুলু বানরও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে বিরল প্রজাতির স্লো লরিজ বা লজ্জাবতি বানর। আছে তক্ষক। গিরগিটি প্রজাতির ছোট এই প্রানীটি দেশি চিকিৎসায় বহুল ব্যবহার হয় বলে পূর্ব এশিয় দেশগুলোতে এই গিরগিটিটি খুব ছড়ামূল্যে বিক্রি ও পাচার হয়।
নানান গাছপালায় সমৃদ্ধ রেমাকালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য৷ ৬৩৮ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছপালা আর লতাগুল্ম পাওয়া যায় সেখানে।
জলাশয়
রেমাকালেঙ্গা অভযারণ্যের ভেতরে আছে বেশকিছু জলাশয়। শুকনো মৌসুমে বনের ভেতরের পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে গেলেও এসব জলাশয়ের জল বন্যপ্রানীদের তেষ্টা মেটায়।
ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বাস
কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত মানুষের বাস আছে রেমা কালেঙ্গা বনে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি হলেও সাওতাল ও উড়াং জনগোষ্ঠির লোকজনও আছেন সেখানে।
মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি
রেমাকালেঙ্গা বনের ভেতরে আছে মুক্তিযোদ্ধে শহীদ নায়েক আব্দুল মন্নান বীর উত্তমের সমাধি। ৩নং সেক্টরের এই যোদ্ধা ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টম্বর পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এখানেই শহীদ হন।
পর্যবেক্ষণ টাওয়ার
অভয়ারণ্যের ভেতর একটি টিলার উপর আছে ছয়তলা পর্যবেক্ষন বুরুজ/টাওয়ার। এই টাওয়ারের উপরে উঠলে বনের বিস্তীর্ণ সীমানা খালি চোখে দেখা যায়।
থাকার ব্যবস্থা
হিল রিসোর্ট। সেখানে পর্যটকদের জন্য কম খরচে থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সেখানে অবস্থান করতে হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।
আসাদ ঠাকুর
কবি, লেখক ও সাংবাদিক
দ.ক.রেমা-কালেঙ্গা