➖
মাহফুজুল ইসলাম সাইমুম◾
আমি ভ্রমণ, রানিং ও বিভিন্ন কাজকর্মে বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় গিয়েছি। সব অঞ্চলেই ভালো মন্দ আছে৷ কিছু জিনিস খুব ভালো লেগেছে, কিছু লাগেনি। আমার ক্ষুদ্র ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখলাম মৌলভীবাজার অঞ্চলটি অন্যান্য জেলা থেকে যেন একটু আলাদা।
এই পর্যন্ত প্রায় ৭/৮ বার মৌলভীবাজার সদরসহ শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ উপজেলা ভ্রমণ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় যা দেখলাম- এই অঞ্চল হল সবুজের সমুদ্র। পাহাড়ের গায়ে চা গাছগুলো যেন সমুদ্রে পাহাড়সম সবুজ ঢেউ। এছাড়াও মৌলভীবাজার অঞ্চলের মানুষের ধৈর্য্য বেশি। একটু ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ। রাস্তাঘাটে কখনও ঝগড়াঝাটির চিত্র দেখিনি৷ ৭/৮ বার ভ্রমণে ২/৩ দিন করে থেকে রাস্তায় এলোমেলো হর্ণ বাজাতে শুনিনি। পথে ঘাটে প্রাকৃতিক কারণেই ধুলাবালি কম। স্থানীয়দের মধ্যে পর্যটকদের নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ নেই। জনবসতির ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে কম।
শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ উপজেলায় মুসলিম, সনাতন, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ, মনিপুরী, খাসিয়া, কিছু স্থানান্তরিত গারো, বনওয়ারি সহ প্রায় ১০/১১ ধর্ম, গোত্র বর্ণের মানুষ বসবাস করে। চা পাতা কেন্দ্রিক জীবন যাপন। প্রত্যেকে নিজ নিজ উপাসনা, প্রার্থনা করছে। একের উপাসনায় অপরের কোন অস্বস্তি নেই।
এই নভেম্বর মাসের ১ তারিখ শুক্রবার দিন ৫০ কিঃমি আল্ট্রা ম্যারাথন দৌড়ালাম সেই দিন সকাল থেকে বিভিন্ন মন্দিরে কীর্তন চলছিল, যখনই জুম্মার নামাজের আযান হল তখন দেখলাম সকল মন্দিরের মাইকগুলো বন্ধ হয়ে গেল। জুম্মার নামাজ উপলক্ষ্যে মসজিদের মাইকগুলো বাজতে শুরু করল। মসজিদে মসজিদে চলতে থাকল হুজুরদের বয়ান ও খুৎবা৷ সকাল ৭টার দিকে দেখলাম এক গোত্রের মানুষ রাস্তার পাশে বটগাছের নিচে পূজা অর্চনা করছে, তাতেও অন্যদের কোন আলোচনা সমালোচনা নেই। অর্থাৎ সবাই সবাইকে খুব সহজে মেনে নিয়েছে।
তবে দূর্বল দিক হল, শ্রীমঙ্গল সদরে ভিক্ষুকের উপদ্রব বেশি। ফলে কিছুটা অস্বস্তি হয়। তবে জনমুখে যেটা জেনেছি এই ভিক্ষুক নাকি শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় নয়। কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনার হাওড় অঞ্চল থেকে শ্রীমঙ্গল এলাকায় মাইগ্রেট করেছে৷ অন্যান্য সব জায়গার মত এখানেও যাতায়াত কিংবা কেনাকাটায় আগে দাম নির্ধারণ করে নেয়া ভালো৷
যারা নিরিবিলি শান্ত প্রকৃতি চান, সাধ্যের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন স্পটগুলো।
দ.ক.সিআর.২৪