1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে কী প্রভাবিত করবে?

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

আসাদ ঠাকুর

মার্কিন ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন এবং চার বছর পর ফিরে আসেন।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফ্লোরিডায় সমর্থকদের এক সমাবেশে তিনি পুনরায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার সমর্থন জিতেছেন তা নিশ্চিত করার পরে, তার বিজয় ঘোষণা করেন এবং জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার বিজয় অভূতপূর্ব এবং বিশ্বাস করেন যে এটি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক আন্দোলন। তিনি একটি শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ আমেরিকা গঠনে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

 

কিন্তু সত্তর দশক থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৌশলগত স্বার্থকেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ফলস্বরূপ, প্রথমে তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায়নি। স্বাধীনতা-উত্তর পরবর্তী দশকগুলোতে সরাসরি বা দাতা সংস্থার মাধ্যমে অনুদান/সাহায্যকে প্রভাবিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ৯/১১ টুইন টাওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে, তাদের মনোযোগ সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম এবং বাণিজ্যের দিকে সরে আসে, ফলে হোয়াইট হাউস প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্বের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবে তা প্রায় উপেক্ষিত হয়েছে, বিশেষত মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ক্ষেত্রে।

 

বিগত হাসিনা সরকার আপাত জোরালো নীতির কথা বললেও নিয়মিত বিরতিতে আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের নানা বৈরি অবস্থান পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ সরকারের ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতি অবজ্ঞা ও ব্রিক্সের প্রতি আগ্রহ এই জিওপলিটিক্যাল অবস্থান পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরুকাল থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে। এই সব অতীত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বর্তমানে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নবগঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি ওয়াশিংটনের আগ্রহ আমেরিকার কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়। চীনের বিনিয়োগের কারণে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রাক্তন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্র সচিব স্টিফেন বিগান বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মার্কিন কৌশলের “মঞ্চের মধ্যমণি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

 

২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যদিও মোটাদাগে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ দলাদলি ও ক্ষমতার পরিবর্তনে তাদের বিদেশনীতি সাধারণত পরিবর্তিত হয় না, তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের নীতিগত অবস্থানের কারণে কিছু ব্যতিক্রম আছে। বিশেষত ওবামা-উত্তর ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে নানা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ন্যাটোর সাথে থাকা না থাকা নিয়ে পশ্চিমা ক্ষমতা কাঠামোর মূল ভিত্তি নিয়েও।

 

সেই সাথে অধ্যাপক ইউনুসের মতো বাংলাদেশে পূর্বে আর কেউ আসেনি যিনি সরাসরি ডেমোক্র্যাট শিবিরের বন্ধুতুল্য। তাই যদি ডেমোক্র্যাটরা বিজয়ী হয়, তবে ড. ইউনুসের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে, যার ফলে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসন নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে। অন্যদিকে, রিপাবলিকান তথা ট্রাম্প প্রশাসন একপেশে, কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল গ্রহণ করতে পারে, যা মানবাধিকারকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। মার্কিন নেতৃত্বের পরিবর্তন—ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক, বিচ্ছিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বা কামালা হ্যারিসের বহুপাক্ষিক, মানবাধিকার-কেন্দ্রিক নীতি—বাংলাদেশের ধর্মীয় উত্তেজনা, বাকস্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকার বিষয়গুলিকে কীভাবে পরিচালিত হবে তাতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

 

অন্যদিকে, ট্রাম্প-হ্যারিস নির্বাচনের ফলাফল ভারত ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিবর্তন আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্যকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে, যা অর্থনৈতিক আধিপত্য ও কৌশলগত অবস্থানের প্রতি নব্যউদারবাদী সামাজিক অস্থিরতা প্রতিফলিত করবে। ড. ইউনুস তার নিওলিবারাল ও পোস্ট-নব্যউদারবাদী চিন্তার মডেল- যেমন সামাজিক উদ্যোগ এবং বিকেন্দ্রীকৃত উন্নয়ন এর জন্য স্বীকৃত ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সমাদৃত। সেই সাথে গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ আধুনিক পুঁজিবাদকে পুনর্গঠিত করতে এবং দারিদ্র্য মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী সহায়তা করেছে ও করছে।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রফেসর ইউনুস নিয়মিত তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জনগণকে সামাজিক ব্যবসায় উৎসাহিত হওয়ার কথা বলছেন। সেই সাথে রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান স্টেকহোল্ডার সাধারণ ছাত্রদের যে দাবি, অর্থাৎ শুধু উপরি কাঠামোয় নয়, ভেতর থেকে সংস্কার তথা সংবিধান, রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে, বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব সামাজিক ব্যবসায়ী উদ্যোগ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং ধর্মীয় উত্তেজনা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাগুলি সুশাসন ও টেকসই ধাঁচের অর্থনীতি নির্মাণে প্রধান বাঁধা, তবে সেটাই শেষ কথা নয়।

 

প্রশ্ন উঠতে পারে, যখন জুলাই অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতা ভারত-আমেরিকা সহ সকল প্রভুত্ববাদী বিপরীতে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক বিকাশের কথা ভাবছে, সবাই বলেছিল ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর কথা। কিন্দু এই দু-মাসে তথাকথিত প্রাচ্য-প্রতিচ্যের সেই গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সুদিনের সম্ভাবনা ও শঙ্কা নিয়ে কথা বাইরে কোন স্পষ্ট অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সামনে আসেনি এই নয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে। এখন পর্যন্ত খুচরা বা পাইকারি বাজারের সিন্ডিকেট দূর করা হয়নি, যা নতুন সরকার এলে অস্থায়ীভাবে হলেও মীমাংসা করা হয়ে থাকে। প্রাচ্যের অর্থনীতিবিদ প্রয়াত সামির আমিনের মতে, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তার পাওয়ার স্ট্রাকচারগত অবস্থানের কারনে বিদেশি লগ্নির মাধ্যমে উন্নতি করতে পারবে না, বরং নিজস্ব অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলেই উন্নতি সম্ভব’। বর্তমান বাংলাদেশে সরকারে যারা আছেন, তারা এ ধারার লোক নন, উদার অর্থনৈতিক-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন। শিক্ষার্থী ও সিভিল সোসাইটি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ এবং বিদেশনীতির ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইন্স ভাবধারার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এর বাইরে তাদের কোনো বক্তব্য চোখে পড়েনি—নিজস্ব পুঁজির গঠন বা অন্য কোনো পরিকল্পনার কথা। সুতরাং, আমাদের সামনে বিশ্বব্যাপী চলমান উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ ও সম্ভাবনা ছাড়া বিকল্প কোনো কিছু বিশ্লেষণের সুযোগ নেই। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন আমাদের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা জানা জরুরী এবং ভাবনার বিষয়।

 

বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিসরে যে পরিবর্তনের প্রবণতা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে একটি অতি-রক্ষণশীল সমাজের দিকে ইঙ্গিত করছে। এমতাবস্থায়, এই নিয়ে আমাদের শঙ্কার যথেষ্ট কারন আছে।

 

উপরন্তু, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ইউনাইটেড নেশন্সের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লবটি স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠেনি, বরং এটি ছিল এক সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত আন্দোলন যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসেনি।” এই বক্তব্যের কারণে ভারত বাংলাদেশ বিষয়ে বর্তমান সরকারের প্রতি কৌশলগতভাবে বিরোধিতার যে মনোভাব রাখে ও তা ন্যায্যতা পেয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এর জন্য বাইডেন প্রশাসনকে সমালোচনা করেছেন। গতপরসু দীপাবলি বার্তায় তিনি বাংলাদেশে চরম বিশৃঙ্খলা নিন্দা করেন এবং পুনর্নির্বাচিত হলে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা ও ভারতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার অঙ্গীকার করেন। ভূরাজনৈতিকভাবে, ট্রাম্পের মন্তব্য হিন্দু আমেরিকান ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের দৃঢ়তায় নিজেকে উপযুক্ত মিত্র হিসেবে তুলে ধরেছে, যেখানে ড. ইউনুসের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে ও একই সাথে বাংলাদেশি মুসলিম রক্ষণশীলদের সাথে সম্পৃক্ততা এই সম্পর্কগুলোর ভিন্নতা নির্দেশ করে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল ভূ-রাজনীতিতে ডেমোক্রাট-রিপাবলিকান অভিন্নতা নীতির বাইরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল থাকবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।

 

তাছাড়া ২০১৬ সালে হিলারিকে হারিয়ে যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন, তখন ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রেই ছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তখন ড. ইউনূস বলেছিলেন, “মার্কিন নির্বাচন ভুল রাজনীতির শিকার হয়েছে।”

 

এবার অবশ্য অভিনন্দন জানিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আসাদ ঠাকুর
কবি, লেখক ও সাংবাদিক

দ.ক.সিআর.২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট