এফ এম খন্দকার মায়া, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা◾
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় দখল দূষণে সত্তর লক্ষ টাকায় সংস্কার করা অস্তিত্ব সংকটে খোয়াই নদী । স্থানীয় প্রভাবশালী ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে পৌরসভা পরিকল্পনা প্রকল্পের বাহিরে সরকারের প্রায় সত্তর লক্ষ টাকা ব্যয়ে নদী ভরাট খনন সংস্কার রাস্তা নির্মাণ নামেমাত্র সংস্কার করা হয়েছে।
পৌরসভা ও প্রশাসনের পরিকল্পনা ছাড়াই নদীর তলদেশ খনন করে রাস্তা নির্মাণ করায় ঐতিহ্যবাহী খোয়াই নদীর আয়তন নি:শেষ হওয়ার পাশাপাশি নদীটি ফের মরাখালের রুপ ধারন করছে।
উপজেলার গাজীপুর,আহম্মাদাবাদ,দেওেগাছ ও মিরাশি ইউনিয়নসহ পৌরসভার বুক ছিড়ে ভারত থেকে আসা স্রোত থেকে উৎপত্তি হওয়া খোয়াই নদীটি চুনারুঘাট পৌরসভার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সদর ও উবাহাটা ইউনিয়ন উপর দিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলা ক্রস করে মেঘনা সাথে মিলিত হয়েছে।তবে বাঁক কাটায় নদীর বেশ অংশই দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়ি,পুকুর,স্ট্যান্ড, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা।
ঢাকা সিলেট পুরাতন মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উপজেলার অন্যতম চুনারুঘাট পৌরসভা বানিজ্যিক এলাকা হওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে,চুনারুঘাট মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের মোড় থেকে দুপাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী দখল হওয়ায় নদীর বাঁধের কোনো অস্তিত্বই নেই।পৌরসভা একাংশে নদীর মাঝখানে নির্মিত সেতুর দুই দিকে নদীর দুই পাশের পাকা সড়কের দু'পাশ ভরাট করে বসবাস যোগ্য বাসা ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, এখনো দখল নির্মাণ চলছে। অন্যদিকে বাঁক কাটায় নদীর বন্ধ জলাশয়টি হাটবাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়'রা জানান,খোয়াই নদী দখলের শুরু হয় ২০০০ সালের পর থেকে।তবে ২০১০ পরবর্তীতে পৌরসভার প্রকল্পে বিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসলেও অসৎ কর্তা ও প্রতিনিধি সেটি পরিবর্তন করে নেন।পরবর্তী দ্বাদশ সংসদে বিজয়ী সাংসদ ব্যারিস্টার সুমন ব্যক্তিগত ও সরকারি অর্থে খোয়াই নদী রক্ষায় অপরিকল্পিতভাবে সীমানা এড়িয়ে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করে।নামেমাত্র সংস্কার ও সড়ক নির্মাণ শেষ হওয়ার পরপরই জানা যায় এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সত্তর লক্ষ টাকা।পাশাপাশি সরকার পতনের পর এমপিত্ত্ব হারালে রাস্তার দুই পাশ ফের দখল ও নোংরা বর্জ্য আবর্জনা ফেলার প্রতিযোগিতা লেগে যায়। নদীর দুই পাড়ে গড়ে তোলা রাস্তা ও স্থাপনার মালিক হচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী আরো জানান, ৭০র দশকেও প্রবাহমান খোয়াই নদীর বুকে পাল তোলা পণ্যবোঝাই সারি সারি নৌকা যাতায়াত করত।এখানে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম ছিল খোয়াই নদী এ অংশ। কিন্তু সে সবই এখন অতীত। এ বিষয়ে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসীর দাবি,একসময় নদীটি চওড়া ও খরস্রোতা ছিল। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় নদীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। একসময়ের স্রোতস্বিনী খোয়াই নদী এখন বন্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।খোয়াই নদী রক্ষায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
বিশিষ্ট সাহিত্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম মিজান দ জানান, একসময় এই নদীতে নৌকা ও লঞ্চ চলতো। অবাধে বিচরণ করতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জলাধারা সংরক্ষণ আইন থাকলেও প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও আইন প্রয়োগ না করায় প্রভাবশালীরা নদীর বুকে নির্মাণ করেছে পুকুর,স্ট্যান্ড, বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। আবার কোথাও কোথাও নদী দখল করে ফসলের আবাদ করা হচ্ছে।
তবে নদী দখলের কথা অস্বীকার করেন কতিপয় ভবন নির্মান কারী। তারা বলেন, আমরা কেনা জমির উপর ভবন নির্মাণ করেছি, জমির সকল প্রকার বৈধ কাগজপত্রাদি রয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের দাবি তথ্য-উপাত্ত ও কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নদীর জমি উদ্ধারে প্রযোজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই নদী বিলীন থেকে রক্ষা করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।
খন্দকার মায়া, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ
মোবাইল ০১৭২৮৪০৮৬৮৪
দ.ক.সিআর.২৪