1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন

হারিয়ে গেছে অর্ধেক নদী, চরম সংকটে খোয়াই, বিলীনের পথে করাঙ্গী ও সোনাই! 

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

আসাদ ঠাকুর◾

সত্তর দশকে হবিগঞ্জে ৫০টির বেশি নদী ছিল। তবে এখন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় আছে মাত্র ২২টি নদীর নাম। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে হবিগঞ্জ থেকে অর্ধেকেরও বেশি নদীর নামই মুছে গেছে।

অস্তিত্ব নেই নদীর সঙ্গে মিশে থাকা শত শত খালের। এসব নদী ও খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। দীর্ঘ সময় ধরে খনন না করায় সমতল ভূমিতে পরিণত হওয়া নদীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

যে ২২টি নদী এখনও টিকে আছে সেগুলোও পরিণত হয়েছে খাল বা নালায়। সেই সঙ্গে নদী শাসনে মহা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে কুশিয়ারা, কালনী, খোয়াই, ধলেশ্বরী, সুতাং, রত্মা এবং করাঙ্গীর মতো বড় নদীগুলোও।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এসব নদী হারিয়ে যাওয়া এবং দখল-দূষণের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দায়ী। এখনও যেসব নদী টিকে আছে এগুলো সংরক্ষণ করা না হলে কয়েক বছর পর সেগুলোও হারিয়ে যাবে। এতে চরম সংকটে পড়বে পরিবেশ, প্রকৃতি ও প্রাণীকুল।

নবীগঞ্জের একসময়ের খরস্রোতা শাখাবরাক নদী। এই নদী ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নবীগঞ্জ শহর। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম ছিল নদীপথ। এই নদী দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করত শত শত নৌযান। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এলাকার বাসিন্দারা। গেল চার দশকে সেই নদীটি এখন মৃতপ্রায়। নদীর দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে শত শত বসতি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফলে মরা খালে পরিণত হয়েছে একসময়ের খরস্রোতা নদীটি।

এছাড়াও দখলের কবলে বিলীনের পথে বাহুবলের করাঙ্গী ও মাধবপুরের সোনাই, শিল্পবর্জ্য দূষণে মৃতপ্রায় সুতাং আর ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে শুঁটকি নদী। চরম সংকটে রয়েছে রত্মা এবং হবিগঞ্জ শহরকে ঘিরে থাকা খোয়াইও।

একসময় লাখাই উপজেলায়ও অনেক নদী ছিল। সেগুলোর অনেক নদীই এখন নেই। কয়েকটা নদী খালের মতো হয়ে গেছে। একসময় সেগুলোতে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন হাত-পাও ধোয়া যায় না।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী বা পরবর্তী সময়ে হবিগঞ্জে কতটি নদী ছিল সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে ২০২১ সালের করা একটি তালিকায় তাদের কাছে ২২টি নদী ও ৬৩টি খালের নাম রয়েছে। খালগুলোর চিন্তা বাদ দিয়ে আপাতত নদীগুলো বাঁচানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রত্মা ও ধলেশ্বরীর ৮ কিলোমিটার ড্রেজিং কাজ হয়েছে। সেই সঙ্গে ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন হয়েছে বিজনা-গোপলা, করাঙ্গী, কাস্তি, সোনাই নদীর ১১৭ কিলোমিটার।

হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষায় ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর পশ্চিমপাড়ে ওয়াকওয়ের কাজ হয়েছে। আর শহর থেকে অন্তত ১২ ফুটের বেশি ওপরে উঠে যাওয়া নতুন খোয়া নদী ড্রেজিংসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ১৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

তবে যে ৫টি নদীর খনন কাজ হয়েছে সেগুলো নিয়ে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। স্থানীয়রা বলছেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খননের নামে নদীকে খালে রূপান্তরিত করার কাজ হইছে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জের বিজনা নদী খনন প্রকল্পের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছেন স্থানীয় জনগণ। বাহুবলের করাঙ্গী নদীর খননে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও ব্যর্থ হয়ে এখন নীরব স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘নদী হারিয়ে যাওয়া এবং দখল দূষণের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দায়ী। তারা এসব নদী রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই প্রতিনিয়ত নদী দখল হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা শুনি নদী রক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই প্রকল্প সম্পর্কে জনগণকে অবগত করা হয় না। কিছুদিন তোড়জোড় করে পুনরায় সেই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিবেশ প্রকৃতি ও প্রাণীকুল রক্ষায় নদী বাঁচাতে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। না হলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘নদী রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে নদীর ওপর গড়ে ওঠা ৯৪২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিগুলো উচ্ছেদেও তালিকা তৈরি করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে হাইকোর্টে মামলা থাকায় ৩৩টি স্থাপনায় হাত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘শুধু সাধারণ মানুষ নয়, যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান নদীদূষণ করছে, তাদের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক ড. মো: ফরিদুর রহমান বলেন, ‘নদী দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর। এমনকি দখলদারদের বিরুদ্ধে আদালতেও রাষ্ট্রপক্ষের লড়াই চলছে।

দ.ক.সিআর.২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট