➖
আবু হেনা মোরশেদ জামান◾
দেশে মিডিয়া ট্রায়াল ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এর জন্য দায়ী সস্তা ডাটা সস্তা অনলাইন পোর্টাল ও কোটি টাকা দামের কোটি কোটি টিভি চ্যানেলে হাম্বাদিক ,গাধ্যাপক ও গেনজিও দের মিষ্টি , ঝাল , টক , নাটক শো ! সাথে টয়লেট পেপারের মত কিছু দৈনিক আছে। আর অবশ্যই আছেন- ইউটিউবার ব্রাহ্মন, ইলিশ,জু.সের এর মত ইনফ্লুয়েন্সার এবং জুকারবার্গ স্যারের এই অবিশ্বাস্য আবিষ্কার ফেসবুকের বিদগ্ধ সমাজ- কে যে নেই !
ইনারা যে কোন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি থেকে তদন্তের আগেই চার্জশিট দিয়ে দেন ,আদালত বসান ও বিচার শেষ করে শাস্তিও দিয়ে দেন। দুশ্চিন্তার বিষয় , কখনো সখনো আমাদের স্বীকৃত বিচারব্যবস্হাও অনেকাংশে এদের মতের সাথে সাযুজ্য রেখে বিচারাদেশ দিয়ে দেয়।
অথচ অনেক ক্ষেত্রেই এই জনমত গঠন বা পাবলিক অপিনিয়ন ফর্ম করা হয় প্রতিশোধ প্রবনতা কিংবা টাকার বদলে অর্থাৎ বাণিজ্য হিসেবে অথবা নিজস্ব কায়েমী স্বার্থ বা vested interest অর্জনের জন্য। অনেকাংশেই অর্ধশিক্ষিত, নীচু সংস্কৃতিপ্রবন কেউ বা কোন বিষয়ের ফার্স্ট হ্যান্ড নলেজ ছাড়া বা তদন্ত না করা আরো এক্সটেন্ডেড নলেজবিহীন কোনো গ্রুপও এসব করছেন। এদের কারো কারো ভাষা ব্যবহার ভয়ঙ্কর কুৎসিত, অশ্লীল মুদ্রন ও পঠন অযোগ্য। নিজ মতের বাইরে গেলেই চলে তুমুল গালিগালাজ।
এখনই কি এই হতভাগা দেশে এসব ব্যাপারে সচেতনতা দরকার না ? সমাজের সামষ্টিক বয়কট দরকার না ? রাষ্ট্র এবং আইনি কাঠামো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে এদের এবং অর্ধশিক্ষিত ও ‘কুউদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ রিপোরর্টারদের বিরুদ্ধে কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্হা গ্রহণ করে দেখালে হয়তো এই প্রকোপ কিছু কমতো !
যে কোন রিপোর্ট/ সংবাদ / মতামত / দাবী’র সত্যাসত্য যাচাইয়ের আগে বা তদন্তের জন্য অপেক্ষমাণ বিষয়ে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকার সংস্কৃতি গড়ে না তুলতে পারলে আইনের শাসনের প্রত্যাশা , দুরাশাই থেকে যাবে ।
কোনো পত্রিকায় যে সংবাদ যে পাতায় ( প্রথম পাতা হলে তাই) যত কলাম ( তিন কলাম জুড়ে হলে তাই) জুড়ে যে গুরুত্বে (ট্রিটমেন্টে) ছাপা হয়েছে- প্রতিবাদ বা rejoinder একই গুরুত্বে একইভাবে ছাপার নিয়ম হলে হলুদ সাংবাদিকতা দ্রুত কমে যেতো। তাতে সংবাদ বা তথ্য অসত্য প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট প্রচারকারীকে চাকরিচ্যুতি বা ফৌজদারী কার্যবিধির আওতায় আনতে হতো।
না হলে এ দেশে প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত হবেনা, সৎ লোকেরা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়ে ভালো কাজে সাহসী ও আগ্রহী হবেন না- ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে গণতন্ত্র, সত্য ও সততা, সভ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
বিশ্ব দরবারেও কৌতুক কিংবা ট্রাজেডির উদাহরণ হিসেবে দেখা হতে পারে আমাদের!
লিখেছেন : আবু হেনা মোরশেদ জামান
সচিব, পরিকল্পনা কমিশন, সাবেক সচিব, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্থণালয়।
দ.ক.সিআর.২৪