➖
কালনেত্র প্রতিবেদক◾
শাহ গাজী,কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তী ইতিহাস। জনশ্রুতি আছে বৈরাগ নগরের শাসক দরবেশ শাহ সিকান্দারের পুত্র শাহ গাজী। কালু ছিলেন শাহ সিকান্দারের পোষ্য পুত্র। আর চম্পাবতী ছিলেন সাপাই নগরের সামান্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার কন্যা। এক পর্যায়ে শাহ গাজীর সাথে চম্পাবতির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের মিলনের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক ও ধমীয় বাধা। কিন্তু শাহ গাজী কালুর খন্ড খন্ড যুদ্ধে রাজা মুকুট রায়কে পরাজিত করে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারে। মৃত্যু পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যশোরের ঝিনাইদহ জেলার অন্তর্গত কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বারবাজার অঞ্চলে যে সকল আধ্যাত্মিক সাধক ইসলাম প্রচারে অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে গাজী, কালু ও চম্পাবতী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের সঠিক পরিচয় নিরুপন করতে গিয়ে ঐতিহাসিকগণ নানা মত পোষণ করেছেন। ঐতিহাসিক শতীশ চন্দ্র মিত্রের মতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রাখেন জাফর খাঁ গাজী। তার পুত্রের নাম বরখান গাজী। তিনি সাধারণত বরখান গাজী ও বড় গাজী বা গাজী সাহেব নামে পরিচিত। তিনি সুন্দরবন অঞ্চলের রাজা মুকুট রায়কে পরাজিত করে তার কন্যা চম্পাবতীকে বিয়ে করেন।
ঐতিহাসিকগণের মতো, বিরাট নগরের রাজা ছিলেণ সিকেন্দার শাহ। আর রানী ছিলেন অজুপা সুন্দরী। রাজা রানীর প্রথম পুত্র জুলহাস শিকার করতে গিয়ে নিরুদ্ধেশ হন। গাজী ছিলেন তাদের দ্বিতীয় পুত্র এবং কালু ছিলেন তাদের পালিত পুত্র। রাজা রানী প্রাপ্তবয়স্ক গাজীকে রাজ্য ভার দিতে ইচ্ছা করলেন। গাজী রাজ্যভার না নিয়ে পালিত ভাই কালুকে সাথে নিয়ে পলায়ন করে সুন্দরবনে এসে উপস্থিত হন। তারা ফকির বেশে বহুদেশ ভ্রমণ করে ব্রাক্ষণনগরে মুকুট রাজার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং মুকুট রাজাকে পরাজিত করে ছাপাইনগর শ্রীরাম রাজার দেশে আগমন করেন।
ঐতিহাসিক এএফএম আব্দুল জলিলের মতে,গাজী পৈতৃক বাসভুমি হতে পলায়নপূর্বক বহু জনপদ ভ্রমণ করে ছাপাইনগরের শ্রীরাম রাজার দেশে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাবে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। গাজী, কালু ও চম্পাবতী সম্পর্কে যে বিবরন পাওয়া যায় তা সবই ঐতিহাসিক উপাখ্যান এবং গাজীর গীত, উপন্যাস,পুথিঁ, সাহিত্য কিংবদন্তী জনশ্রুতি বা স্থানীয় প্রবাদসর্বস্ব। গাজীর ঐতিহাসিক সত্যতা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করা দুরুহ ব্যপার।
তবে স্থানীয় কারো কারো মতে সিলেট থেকে সুন্দরবন হয়ে গাজী নামের যে আধ্যাত্মিক সাধক ছাপাইনগরে এসে হাজির হন তিনি বহু হিন্দু ও বৌদ্ধকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের গাজীপুর তার আগমনকাল নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এতটুকু বলা যায় যে, গাজী, কালু, চম্বাবতী কিংবদন্তি কিংবা বাস্তবতায় তারাই সর্বপ্রথম ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেছিলেন গোটা দক্ষিণ বাংলায়। অসীম সাহসী গাজী আস্তানা গাড়ছিলেন গাজীপুরে। কালের বিবর্তনে আস্তানা নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেলেও তাদের স্মৃতি চিহ্ন ধারন করে গড়ে উঠে মাজার!
এই মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মাঘ মাসে বসে মেলা ও ওরস। জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। গাজী- কালুর মাজারে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ জিয়ারতে আসে।
গাজী, কালুর স্মৃতি বুকে ধারন করে নিরব নিথর হয়ে আছে আজকের চুনারুঘাটের গাজীপুর।
দ.ক.সিআর.২৫