➖
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি◾
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের সাবেক যুবলীগ নেতা ও বর্তমান বিএনপি নেতা তাজ উদ্দিন তাজু যুবলীগ নেতা থাকাকালীন সময়ে সে সর্বমহলে যুবলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিল। তার হাতে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের অনেক নেতাকর্মী অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রাণে রক্ষা পান অনেকেই।
সাবেক যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দিন তাজু ১৯৯৪ সালের (৯ই মে) তার দলবল নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রদল নেতা মামুনুল হক মামুন এর ওপর শান্তিবাগ এলাকার সাগরদিঘির পাড়ে অমানবিক সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ওই হামলায় ছাত্রদল নেতা মামুনুল হক মামুনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন। তৎকালীন সময়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ছাত্রদল নেতা মামুনুল হক মামুনকে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে প্রাণে রক্ষা পান ছাত্রদল নেতা মামুনুল হক মামুন।
ওই ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মামুনুল হক মামুনের বড় ভাই মো. শামসুল হক বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেন। শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং-৫, ১৯/৫/১৯৯৪, মামলাটির ধারা ছিল- ১৪৭/ ১৪৮/ ৩২৪/ ৩২৬/ ৩০৭।
পরবর্তীতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুট-পাট, দখল বাজি, অসামাজিক কার্যকলাপ, চুরি ছিনতাইসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত হন তাজ উদ্দিন তাজু ও তার অনুসারীরা।
এরপর ১৯৯৯ সালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুস শহীদ, আওয়ামীলীগ নেতা রহিম মিয়া, ইউসুফ আলী, ডা. রমা বাবু, ইসমাইল হোসেন ও আবু মিয়ার নির্দেশে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মহসিন মিয়া মধুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেন যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দিন তাজুর নেতৃত্বে একদল যুবলীগ নেতাকর্মী। ওই সময় আওয়ামীলীগের এমপি আব্দুস শহীদ তাজ উদ্দিন তাজুসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছিল মহসিন মিয়া মধুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই করলে কোন প্রকার পলিশি ঝামেলা হবে না। পরে যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দীন তাজু তার অনুসারীদের নিয়ে উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় সেন্টারে মহসিন মিয়া মধুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গিয়ে ব্যর্থ হন, এরপর তারা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের জন্য জান উপজেলা পরিষদ সেন্টারে। সেখানে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সময় মহসিন মিয়া মধু যুবলীগের তিন নেতাকর্মীকে ব্যালট বাক্স সহ আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। তখন তাজ উদ্দিন তাজু পালিয়ে যান।
পরে আটক ৩ যুবলীগ নেতাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। থানা থেকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই এর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তিন যুবলীগ নেতাকে থানা থেকে ছাড়াতে না পারায় ওই সময় ক্ষিপ্ত হয়ে যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দিন তাজু ও তার সহযোগীরা আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে শহরে জুতা মিছিল করেন। আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে জুতা মিছিলকে কেন্দ্র করে নিজ দলের যুবলীগ নেতাকর্মী ও ছাত্রদের নেতাকর্মীসহ অন্যান্যরা মিলে যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দিন তাজুকে মারধর করে এক পর্যায়ে তার হাত কেটে ফেলে।
ওই ঘটনায় যুবলীগ নেতা তাজউদ্দীন তাজুর বড় ভাই মো. রইস উদ্দিন বাদী হয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। জিআর - ১৮৯/৯৯, শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং-১৭, তারিখ ১০/ ৩/ ১৯৯৯, মামলার ধারা-১৪৩/১৪১/৩২৪/৩২৬/ ৩০৭।
এসব ঘটনার পরও চরিত্র পরিবর্তন করেনি তৎকালীন সময়ের যুবলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. তাজ উদ্দীন তাজু। এরপর ২০০১ সালে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের গাড়ি বহরে হামলা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে ২০০১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ডিটেনশন মামলা নং ১৬/২০০১ মূলে তাজ উদ্দিন তাজুকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
শুধু তাই নয়' যুবলীগের সন্ত্রাসী তাজ উদ্দীন তাজু ও আব্দুল কাদির সহ কয়েকজনকে ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্র সহ গ্রেফতার করে অস্ত্র মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এরই মধ্যে সাবেক যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দিন তাজু মুজিবুর রহমান চৌধুরী হাজী মুজিব (সোনা মুজিব) এর সাথে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন কর্মকান্ডে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শ্রীমঙ্গল- কমলগঞ্জ নির্বাচনী আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী মহসিন মিয়া মধুর বিপক্ষে গিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রহিম মিয়া, যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দীন তাজু, ডা. রমা রঞ্জন দেবসহ নামধারী বিএনপি ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা মজিবুর রহমান চৌধুরী (সোনা মুজিব) এর ঘড়ি মার্কার পক্ষে টাকার বিনিময়ে কাজ করেন। তখন মজিবুর রহমান চৌধুরী (সোনা মুজিব) ঘড়ি মার্কা পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়ে প্রচার করেছিল আর সেই নির্বাচনে ঘড়ি মার্কার পক্ষে তাজ উদ্দিন তাজু ও তার পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
এসব নানান নাটকীয়তার পর মুজিবুর রহমান চৌধুরী হাজী মুজিব (সোনা মুজিব) যোগ দেন বিএনপিতে। সেই সূত্রে মুজিবুর রহমান চৌধুরী (সোনা মুজিব) এর ছত্রছায়ায় যুবলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজ উদ্দিন তাজু হয়ে উঠেন বিএনপি নেতা। আর যারা প্রকৃতপক্ষে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে অর্থবিত্ত, জীবন যৌবন সব খুইয়েছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে যারা বিএনপির সাথে বেইমানি করে ঘড়ি মার্কার পক্ষে কাজ করেছে এবং হাজী মুজিব ফাউন্ডেশন করেছে, যারা বিএনপি নয় সোনা মুজিবের এর আদর্শ রাজনীতি করে তাদের দিয়ে ঢাকা থেকে টাকার বিনিময়ে তৈরি করা হয় বিএনপির কমিটি। ওইসব ঘটনা এবং সদ্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সাবেক যুবলীগ নেতা তাজউদ্দীন তাজুর নাম ঘোষনার পর থেকে নেতাকর্মীরা রাগে ফুঁসে উঠেছে।
এসব ঘটনায় সর্বস্তরের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সহ সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপিকে পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী করে তুলতে সাবেক যুবলীগ নেতা তাজ উদ্দিন তাজুকে যেন বিএনপিতে কোন প্রকার ঠাই না দেওয়া হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে সাধারণ নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে নামবে বলে জানান।
দ.ক.সিআর.২৫