সম্পাদকীয়◾
পোশাক শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের, সব পেশার মানুষদের প্রতি বৈষম্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিকেরা৷ কিন্তু সেই সাংবাদিকেরা যখন নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন, তাদের দাবি আদায়ের রাস্তা খুবই সংকীর্ণ৷
এমন একটা সময় ছিল, পত্রিকায় কোনো সংবাদ প্রকাশ হলে তা ছড়িয়ে যেতো দেশের আনাচে-কানাচে। নড়ে বসতো প্রশাসন, ব্যবস্থা হতো তড়িৎ গতিতে।
সময় গড়িয়েছে, এসেছে অনলাইন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন। ফলে একদিকে যেমন সংবাদ প্রকাশের পরিমাণ বেড়েছে, ব্যস্তানুপাতিক হারে কমেছে মানুষের কাছে পৌঁছানোর হার৷ হাতেগোণা কিছু সংবাদপত্র ও টেলিভিশন ছাড়া, বাকিরা টিকে আছে কোনোরকমে৷
আর এই কোনোরকমে টিকে থাকতে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা। সাংবাদিকরা সঠিক সংবাদ প্রকাশকে সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব মনে করলেও, গণমাধ্যমের মালিকানা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের হাতে।
এই মালিকরা কি সবসময় সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করাকে নিজেদের প্রধান লক্ষ্য ভাবেন? নাকি নিজেদের ব্যবসা ও প্রভাব টিকিয়ে রাখতে নানাভাবে নিজের মালিকানার গণমাধ্যমটাকে কাজে লাগান?
যে কোনোভাবে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে গিয়ে মূল আর্থিক চাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়ে সাংবাদিকদের গলায়। ফলে এক্ষেত্রে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। বেতন-ভাতা নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে কথা বলতে পারছেন নিম্ন ও মধ্যম স্তরে কর্মরত সাংবাদিকরা? দেশের অর্থনীতির সাথে ভারসাম্য রেখে সঠিক প্রক্রিয়ায় কি মূল্যায়ন হচ্ছে সাংবাদিকের কাজ?
ফলে সব ছাপিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, পর্যাপ্ত বেতন নিশ্চিত করা হলে কি সাংবাদিকতার মান নিশ্চিত করা সম্ভব?
মোরশেদ হাসিব হাসান বলছেন, পেটে ভাত না থাকলে, আমার জীবন মান উন্নত করার সুযোগ না থাকলে, আমার চাহিদা পূরণ না হলে, হয় আমি পেশাটি ছেড়ে দেবো, কিংবা পেশাটিকে কলুষিত করবো৷”
সাংবাদিকদের হতাশার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা, শ্রমঘণ্টার হিসেব মাথায় না রেখে কাজ করার পরও মাস শেষে প্রাপ্য মজুরি সঠিকভাবে না পাওয়ার দুঃখ বলছেন তারা৷
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবে কর্মরত রাকিবুল হাসান বলছেন, মাস শেষে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষায় অনেকেই বাধ্য হন মূল পেশার পাশাপাশি বিকল্প অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজতে। এর ফলে সাংবাদিকতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মনে করেন তিনি৷
কালনেত্র এর সম্পাদক মনে করেন অল্প বেতনে কর্মী খুঁজতে গিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাংবাদিকতা।
দ.ক.সিআর.২৫