কালনেত্র প্রতিবেদক◾
চুনারুঘাট প্রেসক্লাব এর সাধারণ সদস্য সাংবাদিক ফখরুদ্দীন আবদাল গতকাল ২৬ জানুয়ারি রবিবার তার ব্যক্তিগত এফবি আইডিতে লিখেন- চুনারুঘাট প্রেস ক্লাব এর সাধারণ সদস্য পদ থেকে আমি পদত্যাগ করলাম।
কারণ হিসাবে তিনি যা যা উল্লেখ করেন নিম্নে তা ক্রমিক আকারে তোলে ধরা হলো-
১) কোন এক সময় কথিত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিকগণ বিশেষ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর প্ররোচনায় আমাকে প্রেসক্লাব ও পাঠাগারে জঙ্গী আখ্যায়িত করেছিল! (সবুর করেছি)
২) প্রেসক্লাবের কমিটি একটি বিশেষ জায়গায় আগেই গঠিত হতো, এতে কখনও ডাক পাইনি, পাওয়ার কথাও নয়, কারণ আমার দ্বারা তাদের কোন লাভ হবে না! কিছু আদর্শের ভিন্নতার কারণে! একবার নির্বাচন কমিশনের একজন হয়েও দেখেছি টাকা ও বিশেষ বলয়ের নির্বাচন! সুবিধা প্রদান! কখনোই সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হয়নি। বিশেষ সুবিধা দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হইতো। যেকারণে অনেক সদস্য ক্লাব ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন! এখনও আসতে চান না! পরবর্তীতে একাধিক সংবাদিক সংগঠন তৈরী হয়!
৩) প্রেসক্লাব এর ভাবমূর্তি উজ্জল করার কোন সামগ্রীক প্রচেষ্টা কখনও ছিল না! ছিল না সামাজিক সেবামূলক কোন উদ্যোগ! প্রস্তাব দিতাম, হারিয়ে যেত! ফুলের মালা, ক্রেস্ট, আর তোষামোদির অনুষ্ঠানই হতো ক্লাবে বেশি!
৪) অনেক সেশনে আমি সিনিয়র হওয়া সত্তেও কমিটি গঠনের পরও নির্বাহী সদস্য করা হয়নি! (সর্বশেষ কমিটি ছাড়া)!
৫). কখনও কোন দায়িত্বও দেয়া হয়নি !
৬). সিনিয়রিটি রক্ষা করা হয়নি!
৭). বড় ভাই সভাপতি হয়ায় সিনিয়রকে বাদ দিয়ে পেশায় নতুন ছোট ভাইকে পদ দেয়া হয়! আমাকে তখনও সাধারণই রাখা হয়েছিল!
৮). কোন উপ কমিটিতে কখনও রাখা হয়নি!
৯). রিলিফের কম্বল-দুম্বার গোস্ত ও রেজুলেশনে স্বাক্ষর দেয়ার দাওয়াত পেতাম!
১০) অন্যের টাকায় পিকনিক হইতো। নেতা ও টাকাওয়ালাদের কাছে অবনত করে রাখা হইতো! কাবিখার দান, বিশেষ দান ও খরচের হিসাবে স্বাক্ষরের দাওয়াত পেতাম! কেউ, শালী, বউ, বোন, শালা, ছেলে, মেয়ে, আত্মীয় নিয়ে পিকনিকে অংশগ্রহণ করতেন।
১১). নিজ সামান্য জ্ঞান থেকে কিছু দায়িত্ব ও হক্ক কথা বলার চেষ্টা করতাম। এতে বঞ্চনার শিকার হতাম। সামাজিক কর্মসূচীর প্রস্তাব দিতাম, সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতাম, সাংবাদিক কল্যাণ ফান্ড গঠনের প্রস্তাব দিতাম, কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন হইতো না।
১২). বিশেষ কজনের মধ্যেই থাকতো মূল নেতৃত্ব! ফলে ক্লাব কুক্ষিতগত হয়ে পড়ে। এমনকি ক্লাবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সেক্টর থেকে সুবিধা নেয়া ছিল খুবই স্বাভাবিক!
১৩) জঙ্গি-মৌলবাদী ট্যাগ দিয়ে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল আমাকে!
১৪. বিগত সময়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিদের পালাবদলের পরও ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেয়া হয়েছে!
১৫). আহ্বায়ক কমিটি দলীয় বলয়ে না গিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি কমিটি গঠন করার সুযোগ ও যোগ্যতা ছিল।
১৬). যোগ্যতা ও সততার যাছাই না করে বিশাল সাধারণ কমিটি বৃদ্ধি ভাল ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি।
১৭) প্রকাশ্যে সুবিধা ভোগ করেও (যার প্রমান মিডিয়াতে স্পষ্ট) তারা গুরুত্ব পদে স্থান পায়! আর জঙ্গি-মৌলবাদী গালি খাওয়া বঞ্চিতদের দূরে রাখা হয়!
১৮) কিছু মানুষের বলয়ের কারণে নতুন-পুরাতন সাদা মনের কিছু মানুষের মনে কাদা লাগানো হয়েছে!
২০) ক্লাবের নতুন পুরাতন সকল বড়-ছোট ভাইদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আপনাদের কষ্ট দেয়ার জন্য, আপনাদের গীবত করার জন্য। আপনারা আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহও যেন আমাকে ক্ষমা করেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো শুধুমাত্র প্রেসক্লাব সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে লিখেছেন বলে ব্যক্ত করেন ফখরুদ্দিন আবদাল। আরও জানান, জঙ্গি খেতাব ও প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে রাখায় কষ্টের বহির্রপ্রকাশ করেছি। কোন পদ পদবী আশায় বা প্রতিহিংসার বসে কাওকে হেয় করতে চাইনি। পদের লোভ আমার ও আমার ধর্মীয় আদর্শের বিপরীত।
তিনি প্রেসক্লাব এর দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ রাখেন- যেন ক্লাবের সকল ডকুমেন্ট থেকে তার নাম-ছবি মুছে দেয়া হয়। এবং আর ব্যবহার না করা হয়। এমনকি তার মুত্যুতে কোন ছবি ব্যবহার ও অনুষ্ঠান না করার আবেদন জানান। তবে সবার কাছে জানাজায় শরিক ও দোয়ার ফরিয়াদ করছেন।
পরিশেষে আরও জানান, আমি অসুস্থতা ও অযোগত্যতার কারণে সাংবাদিকতার মত বড় একটি এবাদত ও দায়িত্ব পালন করতে পারিনি! আমি আল্লাহর কাছে, সমাজের সকল মানুষের কাছে ও সকল সাংবাদিক ভাইদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাই। আমাকে ক্ষমা করবেন। বেঁচে থাকলে আপনাদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু প্রেসক্লাব কেন্দ্রীক নয়।
দ.ক.সিআর.২৫