➖
সম্পাদকীয়-
একটা কারণ হতে পারে মোটামুটি স্বীকৃত রাজাকার কিংবা রাজাকারদের উচ্চ পর্যায়ের যেসব সদস্যকে আমরা দেখি তাদের একটা বড় অংশেরই দাড়ি টুপি আছে। সুতরাং এটা অনুমান করা যায় যে যৌবনে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তারা হয়তো সে লেবাসেই ছিল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এটাকে রিসেন্টলি বাংলাদেশে যেভাবে দেখা হচ্ছে সেটা নিয়ে। একদল আহত গলায় বলে, না আপনি এভাবে রাজাকারদের দাড়ি টুপিসহ টিভি সিনেমায় দেখাতে পারেন না। এতে ইসলামের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। আবার ধরেন দাড়ি টুপিওয়ালা কেউ যদি মাদ্রাসায় কোনো অপকর্ম করতে গিয়ে ফেসে যায় তখন সবাই বলবে, আলেম কখনো ধর্ষক হয় না, ধর্ষকই আলেম সাজে। এটা এক অদ্ভুত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। তাদের মতো চিন্তা করলে প্রথম ক্ষেত্রে দাড়িটুপি মানেই ইসলাম, পরেরটায় দাড়ি টুপির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই।
আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রথমটায় ইসলামের কিছুই যায় আসে না, কিন্ত পরেরটায় যায় আসে (কারণ এই পাপের জন্য গোটা একটা জনপদ ধংব্বস হয়ে গিয়েছিল) ইসলাম আপনাকে বলে না যে টিভি সিনেমা দেখেন, আবার সেই জিনিস নিয়ে কান্নাকাটি করেন!
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নামের একজন ওয়াজবক্তা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ৭০ ভাগ ছেলে গাজা খায়৷ এদের মাহফিলে প্রায়ই শুনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি রেগুলারলি ডাস্টবিনের চিপায় চাপায় নবজাতক বাচ্চা পড়ে থাকে। কিন্ত আমি এই নিয়ে আজ অব্দি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কাউকে কান্নাকাটি করতে দেখিনি, ইন্টারনেট তোলপাড় করে ফেলতে দেখিনি যে আমাদেরকে নিয়ে এমন কথা বলা হচ্ছে কেন।
তবে দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে- রাজাকাররা ধর্মকে ব্যবহার করে মুসলমান হত্যা করেছে। তাছাড়া আলবদর, আলসামশ, ছাত্রসঙ্ঘ, শান্তি কমিটি সবগুলোর নেতৃত্বস্থানীয় ব্যাক্তিরা ছিলো দাঁড়িটুপি আলা। কারণ ধর্ম ছিলো তাদের অস্ত্র। বেশভূষায় দাঁড়িটুপি রাখলেও তারা মানুষ হত্যা করেছে। লুট, ধর্ষন, সম্পত্তি দখল সহ মানুষকে ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়েছে। এ সকল কারণে তাদের প্রতিকৃতি হিসেবে দাঁড়ি-টুপি দেখানো হয়।
প্রকৃত মুসলমান হলে যারা মানুষকে হত্যা করেছে তাদের ঘৃণা করার কথা। প্রকৃত মুসলমান হলে যারা ধর্মকে অপব্যবহার করেছে যাদের কারণে মুসলমান ধর্ম অপমানিত হয়েছে তাদের ঘৃণা করার কথা।
দাঁড়ি টুপি থাকলেই সে মুসলমান নয়। ইয়াবা ব্যবসায়ী সুদখোর ঘুষখোর মিথ্যাবাদী অথচ দাঁড়ি টুপি আছে এমন লোকের অভাব নেই সমাজে। যারা এইসব চোখে দেখেনা তারা ধর্মকে পুঁজি করে টিকে থাকা যুদ্ধাপরাধি দলের লোক অথবা সামাজিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
সুতরাং মোদ্দাকথা হচ্ছে স্টেরিওটাইপিং যেভাবে হবার হবেই। আপনি যদি নিজেকে ভালোমতো চেনেন সেটাই যথেষ্ট। এসব নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল হবার কোনো মানে হয় না।
দ.ক.সিআর.২৫