➖
চুনারুঘাট প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রিজ এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের কতিথ সমন্বয়ক ফরহাদ ইবনে রুমি (২৮)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার রুমি চুনারুঘাট উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ উবাহাটা এলাকার মৃত দিদার হোসেনের পুত্র।
এরআগে ১২ ফেব্রুআরি ভোর ৫টায় শাহজিবাজার আর্মি ক্যামের ক্যাপ্টেন আরাফি তাজোয়ার আমিন ১৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর দল ফরহাদ ইবনে রুমির নিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
জানাযায়, মঙ্গলবার চুনারুঘাটের নতুনব্রিজ এলাকায় আদালতের আদেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন চুনারঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুব। এতে ফরহাদ ওরফে রুমি সহকারী কমিশনারের সাথে অশুভ আচরণ করে। একপর্যায়ে অভিযানের সময় লাটি দিয়ে হামলার চেষ্টা করে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর অনুরোধে সেনাবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে চুনারুঘাট থানায় সোপর্দ করে।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার প্রভাবশালী মোঃ ফরহাদ ওরফে রুমি গংরা উবাহাটা মৌজার খাস খতিয়ানে আনুমানিক ২০ ফুট রাস্তা দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করে। তফসিল ভূমি উবাহাটা মৌজার এস, এ দাগ নং-১৫১৫, হালে ১৫৮৮ ইহাতে ১২শতক ভূমির মালিক মোঃ বাবু মিয়ার ভূমির সম্মুখ ভাগে দখলকৃত ২০ ফুট রাস্তা। যার বিরুদ্ধে উল্লেখিত ১২ শতক ভূমির মালিক মৃত আব্দুল কাদিরের পুত্র একই এলাকার মোঃ বাবু মিয়া গত ৬/১২/২৩ ইংরেজি তারিখে ফরহাদ ওরফে রুমি গংদের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার মিস মামলা নম্বর - ৩/২০২৪(চুনা) এর গত ২১/০৫/২০২৪ ইং অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ম পক্ষ মোঃ বাবু মিয়ার পক্ষে আদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশের পর সহকারী কমিশনার ভূমি উচ্ছেদ করলে রুমি বাধা দেয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মোঃ বাবু মিয়া জানান, মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানের পর থেকে আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে হামলা করবে বলে প্রকাশ্য হুমকি-ধমকি দিচ্ছে ফরহাদ উদ্দিন রুমি ও তার দলবল। এবং আমার বাসার বাহিরের জানালার গ্লাস ইতিমধ্যেই তারা ভেঙ্গে ফেলেছে। শুধু তাই নয় আমার বাসার আশপাশে তারা বর্তমানে প্রকাশ্যে মহরা প্রদর্শন করছে তার লোকজন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুব জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে উক্ত স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযানে গেলে ফরহাদ সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, ফরহাদ যুবলীগ কর্মী হলেও ৫ আগস্টের পর সমন্বয়ক বনে গিয়ে তার এলাকার মানুষকে নির্যাতন, নিপিড়ন ও শায়েস্তাগঞ্জের ঢাকা সিলেট মহাসড়কে সমন্বয়ক পরিচয়ে চিনি ছিনতাই সহ নানা অপকর্ম করে আসছিলো। এমনকি গত ২০২৪ সালে চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা সড়ক থেকে ফরহাদ ওরফে রুমির নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা আজমান সহ তার লোকজন সমন্বয়ক পরিচয়ে একদল যুবক চালক ও মালিককে মারধোর করে চিনি বোঝাই ট্রাক ছিনতাই করে নিয়ে যায় । পুলিশ ঘটনার পরদিন অভিযান চালিয়ে ট্রাক ও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার করিমপুর গ্রামের রুবেল মিয়া (২২) নামে এক যুবককে আটক করলেও অদ্যবধি চিনির বস্তা উদ্ধার হয়নি। পরে তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে ফরহাদের সহযোগী রুবেলকে ১৫১ ধারায় চালান করলেও ফরহাদ সহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেননি।
এছাড়াও গ্রেপ্তার রুবেল তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ, আজমান সহ সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে জানায়, ঘটনার সময়ে সে সহ তার দলবল ঢাকাগামী চিনি বোঝাই ট্রাক ওই এলাকায় পৌছলে একদল যুবক ব্যরিকেড দিয়ে ট্রাক আটকে কাগজপত্র দেখাতে বলে। কাগজপত্র দেখানোর পরও অবৈধ বলে চালক ও মালিককে মারধোর করে চিনি নিয়ে চম্পট দেয়। এ বিষয়ে চিনির মালিক চুনারুঘাট থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ট্রাকসহ রুবেলকে আটক করলেও চিনি উদ্ধার হয়নি। এমন একাধিক ঘটনার ত্রাস ফরহাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।
এদিকে রুমি গ্রেপ্তারে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। তার বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় মামলা রুজু হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ওসি নুর আলম জানান, সেনাবাহিনী হস্তান্তর করার পর বাবুল মিয়ার দায়েরকৃত মামলায় তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
দ.ক.সিআর.২৫