মাধবপুর প্রতিনিধি◾
হবিগঞ্জের মাধবপুরে দুর্নীতির অভিযোগ করায় স্থানীয় কিশোর ও যুবকদের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার শাহজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানোয়ার মোহাম্মদ রেজাউল করিম এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে একটি তালিকা নিয়ে স্থানীয় কিশোর ও যুবকরা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট এ ব্যাপারে জানতে চান। এসময় প্রধান শিক্ষক কোন জবাব না দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সাথে সাথে উপস্থিত শিক্ষক ও স্থানীয় যুবকরা প্রধান শিক্ষককে মাধবপুর তিতাস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরিক্ষা করে প্রধান শিক্ষকের ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস একটু বেড়ে গেছে বলে জানান।"
এই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে প্রধান শিক্ষকের পক্ষের লোকজন স্থানীয় সাংবাদিকদের তথ্য দেন প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগের চাপ দেওয়ায় তিনি ভয়ে স্ট্রোক করেছেন। পরে প্রধান শিক্ষকের পক্ষের লোকজন তাকে নিয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে মারামারিতে আহত হয়েছেন বলে রেকর্ড করিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দি ইউনাইটেড হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে সিলেটে নিয়ে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।"
এই ঘটনার ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক চেয়ারে বসে আছেন এবং স্থানীয় যুবকরা প্রধান শিক্ষককে একটি কাগজ দেখিয়ে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক জ্ঞান হারিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের ভাগ্নে পরিচয়ে ফজলে রাব্বি নামে এক ব্যাক্তি বাদী হয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের নাম উল্লেখ করে থানায় করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, স্থানীয় যুবকরা লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা করে চাঁদা দাবি করছে এবং টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। অথচ ভিডিও ফুটেজে কারুর হাতে কোন লাঠিসোঁটা বা রড দেখা যায়নি। এমনকি প্রধান শিক্ষকের গায়ে কাউকে হাত তুলতে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে মামলার আসামি ফয়সাল মিয়া জানান, বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি করে নিয়ে গেছে প্রধান শিক্ষক ও তার সিন্ডিকেট। এছাড়া পড়ালেখার মান খারাপ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সচেতন অভিভাবকরা সন্তানের এখানে ভর্তি না করে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। আমরা এব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আমরা উনাকে নিয়ে মাধবপুর তিতাস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরিক্ষা করে জানান উনার ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস একটু বেড়ে গেছে। এখন মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে আমাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার একজন স্বাক্ষী জানান, এখানে মারামারি, চাঁদা দাবি, ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমি জানি না।
স্থানীয় চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন চৌধুরী বলেন, এলাকার যুবকদের এভাবে বিদ্যালয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেখানে কোন ধরনের মারামারি, ছিনতাই বা চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেনি। আমি এই বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলাম ছয় বছর। এখানে একটা আওয়ামী লীগের দুষ্টচক্র আছে। তারা দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লুটপাট করতেছে। আমি যখন সভাপতি হয়েছিলাম এই বিদ্যালয়ের ফান্ডে ছিল আট হাজার টাকা।"
একটি টিনসেড বিল্ডিং এর চাল ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল। আমার সময়ে প্রায় ৯৬ লাখ টাকার অবকাঠামো, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি ও আসবাবপত্র তৈরি করে ৪৬ লাখ টাকা ফান্ডে রেখে এসেছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ৪৬ লাখ টাকাসহ পরবর্তী সময়ের সব আয়ের টাকা খরচ হয়ে গেছে কিন্তু বিদ্যালয়ের দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। দীর্ঘদিন যাবত অডিট না হওয়ায় গুটি কয়েকজন ব্যাক্তি ফান্ডের টাকা লুটেপুটে নিচ্ছে।