➖
আজাদ কবির◾
সিলেটে সংবাদপত্রের যাত্রা শুরুর পর থেকে অর্থাৎ ১৮৭৫ সালে সাপ্তাহিক “শ্রীহট্ট প্রকাশ” বাজারে আসার পর গত দেড়শ বছরে অনেকগুলো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বৃটিশ আধিপত্য অবসানের শেষ পর্যায়ে সিলেট অঞ্চলে দৈনিক পত্রিকার যাত্রা শুরু। ত্রৈমাসিক, মাসিক, সাপ্তাহিক এবং অর্ধ সাপ্তাহিকের দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আরও সাহসের সঙ্গে দৈনিক প্রকাশের ঝুঁকি নেন বৃহত্তর সিলেটের সাংবাদিকরা।
সিলেট থেকে প্রকাশিত যে দুএকটি পত্রিকার মাধ্যমে এ অঞ্চলে সাংবাদিকতার সূচনা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ‘পরিদর্শক”। পরিদর্শককে সিলেটের সংবাদপত্রের পথপ্রদর্শক বলা চলে। এর সম্পাদক ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। ১৮৮০ সালে পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সময়ে সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার মধ্যে ছিল দৈনিক বলাকা (১৯৩৯), দৈনিক সূর্যোদয় (১৯৪০), দৈনিক ইনকিলাব (১৯৫২)।
এছাড়া সাপ্তাহিকের মধ্যে ছিল শ্যীহট্ট মিহির (১৮৮৯), শ্রীহট্রবাসী (১৮৯৩), শ্রীদেশ বার্তা (১৯০৭), প্রজাশক্তি (১৯০৯), দেশবার্তা (১৯১৭), জনশক্তি (১৯২০), পূরবী (১৯৪৮), জনমত (১৯৩৩), অভিযান (১৯৩৩), জাগরণ (১৯৩৮), আল জালাল (‘১৯৪০), মুক্তি (১৯৩০), জনশক্তি (১৯২৮), নওবেলাল (১৯৪৮) সহ আরো অনেকগুলো পত্রিকা।
বৃহত্তর সিলেটের সাংবাদিক কর্তৃক সিলেটের বাইরে থেকে প্রকাশিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে-শিলচর থেকে নগেন্দ্রচন্দ্র শ্যাম কর্তৃক “ভবিষ্যৎ” (১৩৩৩ বঙ্গাব্দ), শিলচর থেকে বিধুভূষণ রায় কর্তৃক “শিলচর” , কলকাতা থেকে বিধুকৃষ্ন চক্রবর্র্তী কর্তৃক “সত্যবাদী”,শিলচর থেকে ভূপেন্দ্র চন্দ্র সোম কর্তৃক (১৩৪৬) চমক, এবং শিলচর থেকে মনমোহন মজুমদার ও কেদারনাথ চৌধুরী কর্তৃক জনশিক্ষা।
সিলেটের সংবাদপত্রের ইতিহাসে সাপ্তাহিক যুগভেরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৩০ সালের ১০ নভেম্বর এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যুগভেরী সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রুপান্তর হয়। সিলেটের সাংবাদিকতার ইতিহাসে আসাম হ্যারাল্ড এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া সিলেট থেকে হাতেগোনা ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিউ এজ, উইকলি ক্রনিক্যাল, ওয়াল্ড পীস, সিলেট ক্রনিক্যাল, দি সিটিজেন ও সুরমা ভ্যালী অন্যতম।
১৯৩৯ থেকে এ পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিকগুলোর মধ্যে রয়েছে- দৈনিক বলাকা (১৯৩৯), দৈনিক সুর্যোদয় (১৯৪০), দৈনিক ইনকিলাব (১৯৫২), দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদী, দৈনিক সিলেট বাণী, দৈনিক সিলেট সংলাপ, মৌলভীবাজার বার্তা, দৈনিক খোলা চিঠি, দৈনিক জৈন্তাবার্তা, দৈনিক সুদিন, দৈনিক আজকের বিশ্ব সংবাদ, দৈনিক জালালাবাদ, দৈনিক যুগভেরী, সিলেটের মানচিত্র, দৈনিক হাওর বার্তা, দৈনিক সবুজ সিলেট, দৈনিক সিলেট সংলাপ, দৈনিক উত্তর পূর্ব, দৈনিক শ্যামল সিলেট, দৈনিক কাজীর বাজার, দৈনিক সুরমা বার্তা, দৈনিক বাংলার দিন, দৈনিক প্রতিদিনের বাণী, দৈনিক প্রভাকর, দৈনিক খোয়াই, দৈনিক স্বদেশ বার্তা, হবিগঞ্জের আয়না, হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস, আজকের হবিগঞ্জ, দৈনিক তরফ বার্তা, দৈনিক বিজয়ের প্রতিধ্বনি, দৈনিক খোয়াই, দৈনিক জনতার এক্সপ্রেস, দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারসহ কয়েকটি পত্রিকা।
সাংবাদিকতা মহান পেশা সন্দেহ নেই। এতে আনন্দ আছে, ঝুঁকি আছে। আর আছে মানবতাবোধে উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা। পল্লী অঞ্চল থেকে যারা সাংবাদিকতা করেন, তাদের কাজটা অত্যন্ত জটিল ও দূরহ। সঠিক তথ্যভিত্তিক কোনো সংবাদের জন্য তাদের লাঞ্ছিত, নিগৃহিত ও অকারণ হয়রানির সম্মুখিন হতে হয়। তবুও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মফস্বলের সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কারো কারো ক্ষেত্রে এটা দ্বিতীয় পেশা হলেও এখন নেশায় পরিণত হয়েছে।
নতুন দিন আসছে, নতুন নতুন সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। তাই একটি সমৃদ্ধ সংবাদপত্র প্রকাশ করার জন্য নতুন নতুন চিন্তাভাবনা আর পরিকল্পনার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করতে হবে। চুনারুঘাটের পল্লী অঞ্চল থেকে তরুণ কবি ও লেখক আসাদ ঠাকুর আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক কালনেত্র পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের পাশাপাশি ছাপা সংস্করণ প্রকাশের যে দুঃসাহসিক উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তার এই উদ্যোগ বাস্তবে রূপ নেবে এ আশা আমাদের সকলের।
দীর্ঘজীবি হউক দৈনিক কালনেত্র।
লেখক- আজাদ কবির, সিনিয়র সাংবাদিক ও সেক্রেটারী- ন্যাশনাল প্রেসক্লাব, ঢাকা
দ.ক.সিআর.২৫