➖
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, সিলেট
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ মধ্যরাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এমসি কলেজ শাখার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান রিয়াদের উপর ছাত্র শিবিরের নৃশংস হামলার ঘটনায় ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় পরিষদের বিবৃতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া। এক বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম মনোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্র শিবিরের বিবৃতি সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। এতে অসত্য তথ্যের পাশাপাশি বহু মিথ্যা অপবাদও রয়েছে।
মিথ্যায় ভরপুর বিবৃতির সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ও বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এমসি কলেজ শাখার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান রিয়াদের উপর ছাত্র শিবিরের নৃশংস হামলার প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তা এদেশের শান্তিপ্রিয় ইসলামী সংগঠন হিসেবে তালামীযে ইসলামিয়াকে আশান্বিত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিলো সবার এই সংঘবদ্ধ প্রতিবাদকে আমলে নিয়ে ছাত্র শিবির তাদের ভুল স্বীকার করবে এবং জড়িতদের বিপক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে লক্ষ্য করছি যে উক্ত ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিবিরের এক্টিভিস্টদের প্রোপাগান্ডা একের পর এক ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পরও শিবির তাদের অফিশিয়াল বিবৃতিতে সেসব মিথ্যা প্রোপাগান্ডার আশ্রয় নিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বিবৃতিতে ছাত্র শিবির হামলার ঘটনাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তালামীযে ইসলামিয়ার মধ্যকার ঘটনা হিসাবে আখ্যা দিয়ে তাদের কোনো দায় নেই বলে মন্তব্য করেছে। অথচ উক্ত ঘটনায় শিবিরকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সহ দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। স্পষ্টতই শিবিরের এমন মন্তব্য নিজেদের দায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার নোংরা ষড়যন্ত্র, যা ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ যে শিবির নেতৃবৃন্দ তাদের অপরাধীদের রক্ষা করতে জুলাই অভ্যুত্থানের একজন সক্রিয় কর্মীকে ছাত্রলীগের দোসর অপবাদ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। আমরা ছাত্র শিবিরকে উন্মুক্ত আহবান জানাই আমাদের মজলুম ভাই রিয়াদের উপর ছাত্রলীগের কাছে তথ্য পাচারের যে অপবাদ তারা দিয়েছেন তার সপক্ষে প্রমাণ হাজির করুক। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে অন্যকে ট্যাগিংয়ের যে নোংরা অভ্যাসের চর্চা ছাত্র শিবির শুরু করেছে তা একটি ইসলামী সংগঠনের মূল্যবোধের সাথে কখনোই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আমরা আরো লক্ষ্য করেছি যে আমাদের কর্মীর উপর হামলার প্রায় বারো ঘন্টা পরে অন্য একজন শিক্ষার্থীকে ভুয়া ব্যান্ডেজ দিয়ে, হাসপাতালের বেডে শুইয়ে একটি প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়, যা দেখা মাত্রই যেকোন সচেতন মানুষ বুঝে যাওয়ার কথা যে এই ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড নাটক ছাড়া কিছু নয়। ছাত্র শিবির এই মিথ্যাচারকেও সমর্থন করেছে এবং দুইজন আহত হওয়ার কথা বলেছে, আদতে যেখানে তালামীয নেতা রিয়াদ ছাড়া কেউ আহত হয়নি।
তালামীযে ইসলামিয়াকে "ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগের সহযোগী" অপবাদ দেওয়া প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, তালামীযে ইসলামিয়া তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ছাত্রদের সকল ন্যায় সংগত দাবী আদায়ের সামষ্টিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে এসেছে। ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনে তালামীয কর্মীরা দেশের সকল প্রান্তে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এরই ধারবাহিকতায় তালামীযের কেন্দ্রীয় পরিষদের নির্দেশনায় জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই আমাদের হাজার হাজার কর্মী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। অন্যান্য সংগঠনের মতো আমরাও নিজেদের ব্যানারে আন্দোলন না করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকে স্বীকার করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ নেতাদেরকে নানা ভাবে ছোট করার চেষ্টা করে, হাজারো শহিদের রক্তে রঞ্জিত এই বিজয়ের ক্রেডিট ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ছাত্র শিবির যে নোংরা অপচেষ্টা করে যাচ্ছে, এরকম নোংরামিতে লিপ্ত হওয়া তালামীযের আদর্শ ও রুচিবিরুদ্ধ কাজ। এদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এ বিজয়ে আমাদের অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা গর্ব করি, কিন্তু ছাত্র শিবিরের মতো বিজয়ের ক্রেডিট ছিনিয়ে নিতে আমরা উদগ্রীব নই।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা ছাত্র শিবির নেতৃত্বকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলেও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও এমসি কলেজে তালামীযে ইসলামিয়ার নেতা-কর্মীরা আপনাদের নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হয়েছে।
বৈষম্যমুক্ত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন ছাত্র-জনতা দেখছে তা ভেস্তে দিতে ছাত্র শিবিরের ফ্যাসিস্ট কায়দায় ট্যাগিংয়ের রাজনীতিই যথেষ্ট। মিথ্যা ট্যাগ দিয়ে এদেশের কোন নাগরিককে সাব-হিউম্যান হিসাবে উপস্থাপন করা এবং নির্যাতন কিংবা হত্যাযোগ্য ঘোষণা করার নোংরা খেলা বন্ধ করতে আমরা ছাত্র শিবিরকে আহবান জানাই।
ছাত্র শিবিরের বিবৃতিতে তালামীযে ইসলামিয়াকে "সিলেটের আঞ্চলিক একটি পীরতান্ত্রিক দল" হিসাবে উল্লেখের বিষয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, শিবিরের শব্দ চয়ন স্পষ্টতই তাচ্ছিল্য ও হীনমন্যতাপূর্ণ। সংগঠনটির নানা ত্রুটির কারণে আলিয়া-কওমি সকল ঘরানার পীর-মাশায়েখ, উলামায়ে কেরাম মহৎ উদ্দেশ্যে তাদের সমালোচনা করে আসছেন। যুগে যুগে শিবির সেসব সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করে সূফীদের এবং আলেমদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যই করে গিয়েছে। নতুন বাংলাদেশে ছাত্র শিবির তাদের পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে রাজনীতি করবে নাকি আগের মতই বিভাজন ত্বরান্বিত হয় এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাবে তা তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইসলামী ঐক্যের যে আহবান আমরা তাদের কাছে শুনতে পাই তা যে কেবল ফাঁকা বুলি নয়, বরং তারা তা সত্যিকার অর্থেই চায় এর প্রমাণ তাদেরকেই দিতে হবে। তারা এমন নৃশংস ও উস্কানিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে তালামীযে ইসলামিয়া সহ আরো অন্যান্য ইসলামী সংগঠন এবং ইসলামপ্রিয় জনতা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে ছাত্র শিবির পুনরায় এদেশের ইসলামী পরিমণ্ডলে পূর্ববর্তী সময়ে তাদের একক কর্তৃত্ববাদী চর্চা আবার ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট; যেখানে অনুপস্থিত পারষ্পরিক শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও বিশ্বাস।
সবশেষে নেতৃবৃন্দ ছাত্র শিবিরকে তালামীযে ইসলামিয়া নেতা রিয়াদের উপর হামলার দায় স্বীকার করে দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুনরায় আহবান জানান।
দ.ক.তালামিয.২৫