➖
কালনেত্র প্রতিবেদক
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ফলে এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দলটি। হাসিনা ছাড়াও দলটির বেশিরভাগ নেতার অবস্থান এখন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। আর দেশের ভেতরে গ্রেফতার, মামলার ভয়ে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আত্মগেপানে আছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় দলটি আবারও সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে। আকস্মিক ঝটিকা মিছিল এবং সামাজিক মাধ্যমের ওপর ভর করে এগোচ্ছে তারা। তবে সরকার পতনের ৯ মাস পার হলেও এর দায়ে ক্ষমা প্রার্থনা বা অনুশোচনা করেনি আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলন দমাতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা।
এখন পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের চিন্তায় বা কথায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনুশোচনা প্রকাশের কোনো ইঙ্গিতও নেই। আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থান ও তাদের সরকারের পতনকে এখনো একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে।
এরই মধ্যে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া দলটির কোনো কোনো নেতা অডিও-ভিডিও বক্তব্য ছেড়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; কেউ কেউ বিবৃতি দিয়েছেন। দেশি-বিদেশি পরিকল্পনায় ষড়যন্ত্র করে সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে বলেই মনে করে আওয়ামী লীগ নেতারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমা চায়নি এবং চাইবে বলেও মনে হচ্ছে না। বরং তাদের ঔদ্ধত্য দিন দিন বাড়ছে। আদালতে দম্ভোক্তি করছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমননীতি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা চায় বা অনুশোচনা করে, তাহলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে, এমন একটা আলোচনা রয়েছে রাজনীতিতে। সরকারেরও কেউ কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনাও রয়েছে। সেটা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের সরকারের পতনের আগে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার তারা চান। কিন্তু অনুশোচনার প্রশ্নে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এজন্য অন্য কোনো পক্ষের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয় নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিদেশে অবস্থান করা দলটির আরেকজন নেতা জানান, পরিস্থিতি সামলাতে তাদের কিছু ভুল ছিল, এমন আলোচনাও তাদের মধ্যে আছে। দলগতভাবে অবশ্য তারা এখনো কিছু বলেননি। এ নেতা উল্লেখ করেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ এখনো হয়নি। তারা এখন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোতে চাইছেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরার বিষয় নিয়েও তারা আলোচনা করছেন।
তবে শুরু থেকেই ক্ষমা চাওয়া বা অনুশোচনার বিষয়টি দলীয় সংস্কৃতিতে নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে ভুলের জন্য দলীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়া বা অনুশোচনা করার সংস্কৃতি নেই। এর আগে কোনো দল তা করেনি। আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগও সে পথে হাঁটবে না।’ দলটি তাদের ন্যারেটিভ এবং অবস্থান নিয়েই রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের জন্য দলটির নেতাকর্মীদের ক্ষমা চাওয়া কিংবা অনুশোচনা তো নেই বরং গ্রেফতার নেতাকর্মীদের আদালতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও দম্ভোক্তি করতে দেখা গেছে। তারা পুলিশ, আইনজীবী এবং গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ করে উচ্চবাচ্য করার সাহস দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপিরা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আদালতে হাজিরা দিতে এসে নিজেদের এখনো ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলে জাহির করার চেষ্টা করছেন।
একজন আইনজীবী বলেন, তারা বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় এ ধরনের আচারণ করার সাহস দেখাচ্ছেন। তবে তারা ভুলে গেছেন যে, অতীতেও অন্য দলের নেতাদের গ্রেফতারের পর কীভাবে আদালতে হাজির করা হতো!
‘তোদের চৌদ্দগুষ্টি খেয়ে ফেলব’ আদালতে নেওয়ার সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হাসানুল হক ইনু-শাজাহান খানের এই হুমকি কয়েক দিন ধরে জনসাধারণের মুখে মুখে। নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দুই আসামির এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও শাজাহান খানের হেলমেট ছুড়ে ফেলার দৃশ্য।
গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার সময় গত রোববার এই পুলিশ সদস্য অভিযোগ করে আর জানান, হাসানুল হক ইনু পুলিশ সদস্যদের ‘তোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলব’ বলে হুমকি দেন এবং হাজতখানায় এসে মিটিং করে পুনরায় হুমকি দেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘লড়াই করে বাঁচতে হবে, বঙ্গবন্ধু শিখিয়ে গেছে। আমরা লড়াই চালাচ্ছি। আইনগত লড়াইও চালাব। ন্যায়ের পথে লড়াই চলবে।’
গত মার্চ মাসে রাজধানীর লালবাগ থানায় করা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলাইমান সেলিমকে। আদালতের এজলাসে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে সোলাইমান সেলিম বলেন, ‘জবাই তো দেবেন, একটু সময় দেন।’
গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর লালবাগ থানার মো. আলী হত্যা মামলায় গ্রেফতার শুনানিতে আদালতের এজলাসে লিফটে না তুলে সিঁড়ি দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
দ.ক.সিআর.২৫