1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

কেউ কি মনে রেখেছে তাকে; আমাদের গৌরব, চাষি হরিপদ কাপালীকে!

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪
  • ১৬৬ বার পড়া হয়েছে

কালনেত্র ◾ বাংলাদেশের পশ্চিমাংশের জেলা ঝিনাইদহের সদর উপজেলার একটি গ্রাম─ আসাননগর। ৬৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাঁর দুই বিঘা জমিতে জন্মানো─ একগোছা অদ্ভুত ধান গাছের দিকে।

বৃদ্ধটি চাষি। অক্ষরজ্ঞানহীন বাংলাদেশের দরিদ্র চাষি। কখনোই পাঠশালায় যাননি। ধানের গোছাটির ডগায় আঙুল ছোঁয়ালেন চাষি। তাঁর চোখে মুখে বিস্ময়! কী এটি? এটি ধানগাছ। কিন্তু, তাঁর পুরো জমির, আশেপাশের সমস্ত জমির, কোথাও, এই ধানগাছটি দেখেননি আজন্ম এই ধানচাষি! তিনি জানেন না─ এই ধান শুধু ওই গ্রামে নয়, এমনকি বাংলাদেশের কোনো জমিতেই, পৃথিবীরই কোথাও এই ধানটি আজও জন্মেনি। বিলিয়ন বছরের এই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র জমিতে এই প্রথম নতুন একটি ধানচারা জন্মালো! পৃথিবীর উদ্ভিদের নতুনতম একটি প্রজাতির সর্বপ্রথম উন্মেষ এই বিলিয়ন বছর বুড়ো মাটির বুক চিরে।

ডারউইনের ‘ন্যাচারাল সিলেকশন” তত্ত্বটি আমরা সকলেই কমবেশ জানি। এই ধানের জন্মটি এই তত্ত্বেরই একটি উদাহরণ। বিশেষ কোনো পরিচর্যা ছাড়াই জীবের বিশেষ কিছু প্রজাতির মধ্যে পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রভাবে প্রায়ই ছোটছোট অভিযোজন ঘটতে থাকে। এই ধানের চারাটির ক্ষেত্রেও এটিই ঘটেছে। এটি অভিযোজিত সর্বপ্রথম একটি ধান-প্রজাতি। ইরি ধানের কয়েকটি প্রজাতির অভিযোজনের ফলেই এই নতুন ধান-প্রজাতিটির সৃষ্টি। তবে খালিচোখে দেখেই একে আলাদা হিসেবে চিনতে পারা এবং এই নতুন চারা থেকে বীজ সংগ্রহ করে একে আলাদাভাবে বপন করে এর বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া─ এ সম্পূর্ণ কঠিন কাজ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক একটি প্রক্রিয়া। সেদিক থেকে আমি বলবো─ এই প্রজাতিটির উদ্ভাবনের লক্ষ্যে তাঁর ইচ্ছে, আগ্রহ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পর্যবেক্ষণশক্তি একজন শিক্ষিত বিজ্ঞানীর মতোই কাজ করেছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

নতুন ধানের ব্রিডিং করার জন্য একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হচ্ছে এই ‘সিলেকশন ব্রিডিং’। হরিপদবাবু এই পদ্ধতিতেই এই নতুন জাতের ধানটি আবিষ্কার করেছেন।”─ বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ধান গবেষণা কেন্দ্রের মৃত্তিকা বিজ্ঞানী জনাব কৌশিক মজুমদার।

হ্যাঁ, আমরা আমাদের গৌরব, চাষি, শ্রী হরিপদ কাপালী’র কথা বলছিলাম এতক্ষণ। ১৯২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই দরিদ্র কৃষক, ১৯৯১ সালের সেই ভোরে, তাঁর জমিতে ফলন হওয়া ইরিধানের জমিতে ধানগুলো কাটতে গিয়ে, সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির একটি ধানচারা, দীর্ঘকাল থেকে ধানচাষের অভিজ্ঞতা থেকেই, আলাদা করে শনাক্ত করেছিলেন, খালি চোখেই। এরপর একই জমিতে খুঁজতে-খুঁজতে তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন এই নতুন প্রজাতিটির আরও কয়েকটি চারা। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া সম্পূর্ণ নতুন এক প্রাণ! ব্যতিক্রমী সেই ধানগাছের শীষে ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে ধান; ধানগাছগুলোর গড়ন ছিল অন্যান্য ধান গাছের তুলনায় খানিক দীর্ঘ ও শক্ত এবং ধানগুলো বেশ পুরু ও মোটা।

এরপর তিনি ব্যতিক্রমী চারাগুলোকে একেএকে আলাদা করে তুলে নিলেন। সংগ্রহ করলেন ধানগুলি। এগুলিকে বীজে পরিণত করে পরের মৌসুমেই ১৯৯২ সালে সেই জমিতেই আলাদা একটি অংশে বপন করলেন। সেই পুরো ধানক্ষেত রূপান্তরিত হয়ে গেলো সম্পূর্ণ নতুন এক প্রজাতির ধানক্ষেতে! সেই ধানগুলো ঘরে তুললেন তিনি, তারপর হিসেব করে দেখলেন─ প্রতি বিঘায় এই ধানের ফলন হয়েছে ২২ মণের বেশি; যেখানে তাঁর চাষ করা আগের উচ্চ ফলনশীল বিআর-১১ বা স্বর্ণা’র ফলন প্রতি বিঘায় ১৮ মণের কাছাকাছি!

তিনি এও লক্ষ্য করলেন─ এই নতুন ধানটির পানি-সহনশীলতাও তুলনামূলকভাবে ছিল বেশি।

কে-সিআর/কৃষি/২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট