1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

তুরস্কের কবি আজিজ নেসিনের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ একটি কবিতা

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

অনুবাদঃ আনোয়ার বাদল
কবিতাঃ চুপ থাকো
—————

চুপ থাকো; কেউ কথা বলো না
কথা বলা একটি লজ্জাজনক কাজ; তোমরা বরং কন্ঠ বন্ধ রাখো;
অবশ্য ইতোমধ্যে তোমরা তা বন্ধ করে দিয়েছো
তোমাদের কাছে কথা যদি রূপাতূল্য হয়
নীরবতা তাহলে স্বর্ণের মতো।

শৈশবকালে আমি যখন কাঁদতাম, হাসতাম বা খেলতাম
তখন সবাই বলতেন ‘চুপ করো ‘
স্কুলও আমাকে কোনদিন সত্য বলতে শেখায়নি; শিক্ষকরা বলেছেন:
“তুমি লেখাপড়া করোনা, চুপ করো”

কোনও এক মেয়ে যেদিন আমাকে প্রথম চুম্বন করেছিল, তখনও তোমরা আমাকে বলেছিলে:
“চুপ থাকো; একটি কথাও বলবে না ”
তোমার কন্ঠ বন্ধ করো;
কথা বলতে বারণ করে বলেছিলো- ‘নীরব হয়ে যাও।’

আমার বিশ বছর বয়স পর্যন্ত এমনটি চলতেই থাকে
বড়দের কথা ছিলো; সন্তান নীরব থাকবে..
রাস্তায় রক্ত ​​দেখে বাড়ি ফিরেছি
তারা আমাকে ফিসফিস করে বলেছে, “চুপ করো; তুমি কি করবে?”
কথা বলে সমস্যায় পড়তে যেওনা, “খামোশ থাকো ”

অফিসে আমার কর্তারা রেগে যেতেন, বলতেন-
” প্রতিবাদে জড়িত হবেন না বরং আপনার নাক পরিষ্কার রাখুন; চুপ থাকুন”
যখন সন্তানের বাবা হলাম
তখন তাদেরকেও চুপ থাকতে শিখিয়েছি
আমার স্ত্রী, সর্বদা আমার অনুগত এবং পরিশ্রমী ছিলেন
তিনিও চুপচাপ থাকতেন
তাঁর বুদ্ধিমতি মা তাকে “চুপ থাকা” শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

বিগত বছরগুলোতে আমার বাবা-মা, প্রতিবেশীরা আমাকে সব সময়ে পরামর্শ দিতেন-
“চুপ থাকো সোনা; কোন কিছুতে জড়িত হয়ো না;
এমন ভান করবে যে, তুমি কিচ্ছু দেখেনি, কিচ্ছু শোননি; চুপ করে থাকো”
মানুষের সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে
অতএব আমরা তাদের সাথে ‘চুপ থাকবো’ এবং আমরা সেরকমই ছিলাম।

ওইদিকে.. ওই, ওখানে কে কথা বলে? তাকে নিরব থাকতে বলে দাও।
উর্ধতন এবং অধস্তন সবাই, সব…সব.. যে যেখানে আছো সবাই
“চুপ করে থাকো।”
আমাদের পাড়া, মহল্লা এবং আমাদের শহরের সবাই “চুপ থাকি”
আমরা আমাদের জিহ্বা গিলে ফেলেছি
আমাদের মুখ আছে কিন্তু কণ্ঠস্বর নেই
এমনকি আমরা একটি সমিতিও গঠন করেছি: যার নাম দিয়েছি- “নীরব”।

আমাদের পুরো দেশ, একটি বিশাল জনগোষ্ঠী, একটি ভয়ংকর শক্তি
তবে বহুকাল নিঃশব্দ থেকে থেকে
আমরা সফল হয়েছি;
আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি; আমরা পদক এবং পুরষ্কার পেয়েছি
শুধুমাত্র “চুপ থাকা”।
কেবল “নিরব থাকা”- এটি একটি দুর্দান্ত শিল্প
এবং একমাত্র এটি ছাড়া আমাদের আর কোন অর্জন নেই।

এটি আপনার সন্তান, স্ত্রী, এবং মায়েদেরকেও শিখিয়ে দিন যে,
কথারা ঝামেলা তৈরি করতে পারে
অতএব তা পরিহার করাই শ্রেয়।
যদি “চুপ থাকো” তাহলে রাতে তোমার ভাল ঘুম হবে;
দেখবে আর কোন দুঃস্বপ্ন তোমাকে তাড়া করছে না ;
কোন সন্দেহ তোমার ভেতরে দানা বাঁধছে না;
তোমার কোন দোষ থাকবেনা যাতে বাচ্চাদের সামনে তোমাকে লজ্জিত হতে হয়।

নিজেকে কথা বলা থেকে বাঁচাও এবং বলো-
“আপনিই ঠিক বলেছেন; আমি আপনাদের সমর্থন করি;
আমি আপনাদেরই একজন”।

কিন্তু হায়!
আমি যদি অমন করে পারতাম!
আমিতো কথা বলতে পারি
কিন্ত তোমরা বলবে না
কথারা তোমাদের মুখের ভেতরই গুমরে মরবে
এক কাজ করো, তোমরা তোমাদের জিহ্বা কেটে কুকুরকে খেতে দাও,
নিঃশব্দ হয়ে যাও
যেহেতু তুমি কথা বলতে যাচ্ছো না; তোমার এটুকু সাহস অন্তত থাকা উচিত
তোমার জিহ্বা কেটে দাও।

ঠিক এইভাবে তুমি আমার পরিকল্পনার সাথে একাত্ম হও
আমার স্বপ্নগুলো নিয়ে
বেদনার্তদের চিৎকার আর চোখের জলের মাঝে আমি অপেক্ষায় বসে থাকি
কেননা আমি বিশ্বাস করি যে একটি মুহূর্ত নিশ্চয়ই আসবে
যখন আমার সকল অপেক্ষার অবসান ঘটবে
ভেঙে যাবে সকল বাঁধ
আমি নির্ভয়ে ফেটে পড়বো….

আমি তখন মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়বো রাজপথে
বাকহীন, তোতলা এবং সকল ভীতরা তখন
সমস্বরে আমাকে চিৎকার করে বলবে
‘কথা বলোও-ও-ও-ও—‘।

(ইংরেজী ভাষায় মূল কবিতাটি প্রথম কমেন্টে দেখুন)

আজিজ নেসিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী
———————————————
আজিজ নেসিন ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর তুরস্কের অন্যতম দ্বীপ ইস্তাম্বুলের প্রিন্সেস হায়বেলিডায় জন্মগ্রহণ করেন। বেশ কয়েক বছর ক্যারিয়ার অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পর, তিনি সমাজতান্ত্রিক ধারার একটি ব্যঙ্গাত্মক সাময়িকীর সম্পাদক হন। তার রাজনৈতিক মতামতের জন্য তাকে বেশ কয়েকবার জেল খাটতে হয়েছিল। তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিলেন তিনি সমগ্র জীবন।

নেসিন সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন ও নৃশংসতার দৃৃঢ় প্রতিবাদ করেছেন। তিনি আমলাতন্ত্রকে ব্যঙ্গ করে বহু ব্যাঙ্গাত্মক রচনা লিখেছেন। তার গল্পগুলি অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ। আজিজ নেসিনকে তুরস্ক, ইতালি, বুলগেরিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অসংখ্য পুরষ্কার প্রদান করেছেন। তাঁর রচনাগুলি ত্রিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। জীবনের শেষভাগে তিনিই একমাত্র তুর্কি লেখক যিনি কেবল তাঁর লেখা বইয়ের উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।

১৯৫৬ সালের জুনে, তিনি আকালবা ম্যাগাজিনে কর্মরত মেরাল লেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৭২ সালে, তিনি নেসিন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিবছর চারটি দরিদ্র ও নিঃস্ব শিশুকে ফাউন্ডেশনের খরচে প্রাথমিক থেকে শুরু করে – উচ্চশিক্ষা দেয়াসহ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া যার উদ্দেশ্য। আজিজ নেসিন তুরস্ক বা অন্যান্য দেশে তাঁর প্রকাশিত বই এবং মঞ্চস্থ হওয়া সমস্ত নাটক ও চলচ্চিত্রের সমস্ত কপিরাইট এবং তার সমস্ত রচনাগুলি যা রেডিওতে ব্যবহৃত হয়েছে তার কপিরাইটগুলি নেসিন ফাউন্ডেশনকে দান করেন।

আজিজ নেসিন ছিলেন একজন বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী। ১৯৮০ সালে দেশটির সেনা প্রধান কেনান এভ্রেন কর্তৃক সামরিক অভ্যুত্থানের পরে, তুর্কি বুদ্ধিজীবীরা প্রচণ্ড নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আজিজ নেসিন ঐ সময়ে বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আজিজ নেসিন ইসলামের কট্টর সমালোচক ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে, তিনি সালমান রুশদির বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ এর অনুবাদ শুরু করেন। তখন তুরস্ক জুড়ে জনপ্রিয় ইসলামিক সংস্থাগুলির তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

১৯৯৩ সালের ২রা জুলাই মধ্য আনাতোলিয়ান শহর সিভাসে একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নেওয়ার সময় মৌলবাদীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারীদের অবস্থানরত একটি আবাসিক হোটেলে আগুন দিয়ে তাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। এতে ৩৭ জন লোক অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন, তবে নেসিন অল্পের জন্যে বেঁচে যান।

তিনি তাঁর শেষ বছরগুলিকে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। আজিজ নেসিন হার্ট অ্যাটাকের কারণে জুলাই ১৯৯৫ সালের ০৬ জুন তারিখে ইজম শহরে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পরে, তাঁর ইচ্ছানুযায়ী কোনও অনুষ্ঠান ছাড়াই তাঁর মরদেহ নেসিন ফাউন্ডেশনের মালিকানাধীন জমিতে অজ্ঞাত স্থানে দাফন করা হয়।

কেসিআর-২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট