সাজ্জাদ হোসেন◾
দুর্বৃত্তদের হামলায় কলেজপড়ুয়া ছেলে ইফাত তালুকদারকে হারিয়ে ১০ মাসের বেশি সময় ধরে পাগলপ্রায় হেলাল তালুকদার। ছেলে হত্যার বিচারের আশায় ঘটনার পরপরই থানায় মামলা করেছিলেন তিনি। তারপর কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছে। কিন্তু এজন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে হেলাল তালুকদারকে।
টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত গ্রামের বাজারের ছোট এক দোকানের এই মালিক বলছেন, পুলিশ তার কাছে থেকে সরাসরি টাকা চায়নি। তবে যতবারই আসামি ধরতে অভিযান চালিয়েছে ততবারই পুলিশকে গাড়ি ভাড়া করে দিতে হয়েছে তার; যা আসলে এক ধরনের ঘুষ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
হত্যা মামলায় এরকম গাড়ি ভাড়া নিয়ে পুলিশের আসামি ধরতে যাওয়ার এমন আরও অভিযোগ পেয়েছে কালনেত্র। এছাড়া অপহরণ মামলা, এমনকি স্বজন হারানোর ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, স্বজনদের উদ্ধারে পুলিশ অভিযান চালানোর সময়ও গাড়ি ভাড়া করে দিতে হচ্ছে পারিবারকে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট না পাওয়ায় অনেক সময় বাধ্য হয়েই বাদীকে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, আইনগতভাবে কোনোভাবেই মামলার বাদীর কাছ থেকে তদন্ত কাজের, অভিযানের খরচ নেওয়ার সুযোগ নেই। এমন ঘটলে সেটা অবশ্যই অপরাধ। এই খরচ যোগানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এসব জায়গায় পরিবর্তন না আনতে পারলে পুলিশের কাছ থেকে কখনও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে না।
৪ বার গাড়ি ভাড়া নিয়ে আসামি ধরা হয় ১জন
হেলাল তালুকদারের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তার কলেজপড়ুয়া ছেলে ইফাতের উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাটাইল থানায় করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুজ্জমান। বর্তমানে তিনি সাভার মডেল থানায় কর্মরত।
হেলাল তালুকদার বলেন, “মামলার পর আসামিদের ধরতে মোবাইল ট্র্যাকিং করে বিভিন্ন স্থানে ৪ বার অভিযান চালান এসআই শহীদুজ্জামান। প্রত্যেকবার অভিযানে যাওয়ার আগে আমারে কয় গাড়ি ভাড়া করতে। এভাবে ৩ বার আমি হাইয়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে দিছি এসআই শহিদুজ্জামানকে। আরেকবার তিনি গেছেন প্রাইভেটকারে।
“আসামি ধরার জন্য একবার কালীহাতি থানার সদরপুর ইউনিয়নে অভিযান যায়। তখন ৬ হাজার টাকা দিয়ে হাইয়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে দিছি। আরেকবার গেল সখিপুর থানায়, ওইখানে দিছি ৭ হাজার টাকা। এর পরেরবার গেছে মধুপুর থানার গাড়োবাজার এলাকায়, সেই সময় গাড়ি ভাড়া দিছি ৬ হাজার। সবশেষে গেছে ঢাকায়, ওই সময় ৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রাইভেটকার ভাড়া করে দিছি এসআই শহিদুজ্জমানকে। এতবার অভিযান চালিয়ে মাত্র এক আসামিকে ধরছেন তিনি। সেটাও মামলার ৫ নাম্বার আসামি।”
হেলাল তালুকদার বলেন, “প্রত্যেকবার অভিযানে দুই-তিনজন পুলিশ যায়। সঙ্গে আমার বড় ছেলেকেও নিয়ে যায়। এভাবে বারবার আমার কাছে গাড়ি ভাড়া নিয়ে অভিযানে গিয়ে আসামি ধরতে না পারায় বড় ছেলের ওপর ক্ষেপে গেছিলাম। কইলাম এভাবে বারবার অভিযানের নামে তোমারেও কষ্ট দিতাছে, আমারেও ফকির করতেছে। পরে আমার ছেলে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ২ জন আসামি ধরে দেয়।”
তবে মামলার বাদীর কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন এসআই শহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, “থানার বাইরে অভিযানে যাওয়ার সময় ওসি স্যাররে জানাইতাম। তিনিই গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতেন। গাড়ি ভাড়া কে দিত আমি জানি না।”
দ.ক.সিআর-২৪