➖
সম্প্রতি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা প্রোপাগান্ডা ও গুজব ছড়ানো হয়েছে, যা জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। কিছুদিন আগে মিয়ানমার এ দ্বীপটি নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করেছিল। বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদের পর এই দাবি ভেস্তে যায়। এরপর আবার গুজব উঠেছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেন্ট মার্টিনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নৌঘাঁটি তৈরির জন্য ইজারা দিচ্ছে। এসব ভিত্তিহীন দাবির বিপরীতে সেন্ট মার্টিনের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী নাম “নারিকেল জিঞ্জিরা” ফিরিয়ে আনলে তা হবে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া।
সেন্ট মার্টিন, যা স্থানীয়ভাবে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামে পরিচিত ছিল, বঙ্গোপসাগরের উত্তরে টেকনাফ উপকূল থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আরব বণিকেরা প্রথম দ্বীপটিকে ‘জিঞ্জিরা’ নামে উল্লেখ করে, যা পরে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯০০ সালে ব্রিটিশরা দ্বীপটির নাম সেন্ট মার্টিন রাখে, তবে দ্বীপে কোনো খ্রিস্টান জনবসতি ছিল না, এবং সেন্ট মার্টিন নামে কোনো খ্রিস্টান সাধু এই দ্বীপে এসেছিলেন—এমন কোনো প্রমাণও নেই। এই নামকরণ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভাবের প্রতিফলন, যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করা হয়। উপনিবেশিক শক্তিগুলি প্রাচ্যের ভূমি ও সংস্কৃতিকে নিজেদের প্রভাবের ছাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সেন্ট মার্টিনের নামকরণ ঔপনিবেশিক মনোভাবের উদাহরণ। ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নাম ফিরিয়ে আনা হবে সেই প্রভাবকে প্রত্যাখ্যান ও স্থানীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি পদক্ষেপ। একইভাবে, পোস্টমডার্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে প্রতিটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি তাদের অধিকার থাকা উচিত। তাই ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা।
ভারতের কিছু মিডিয়া এবং মিয়ানমারের মিথ্যা দাবির বিরুদ্ধে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামটি পুনঃপ্রবর্তন হবে যথাযথ সাংস্কৃতিক জবাব। আন্তর্জাতিক মহলে এটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমরা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নাম পরিবর্তনের ফলে কিছু আন্তর্জাতিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে সেগুলো সমাধানে হাইব্রিড নাম ব্যবহার, আন্তর্জাতিক মানচিত্র সংস্থা ও নেভিগেশন ব্যবস্থায় হালনাগাদ এবং পর্যটন ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নামটি পরিচিত করা যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ তাদের উপনিবেশিক নাম পরিবর্তন করেছে। ভারতের বোম্বে থেকে মুম্বাই, বার্মা থেকে মিয়ানমার, সেলন থেকে শ্রীলঙ্কা, রোডেশিয়া থেকে জিম্বাবুয়ে, এবং ব্যাটাভিয়া থেকে জাকার্তা—এসব পরিবর্তন সাংস্কৃতিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদাহরণ। বাংলাদেশের জন্যও সেন্ট মার্টিনের নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ করা হবে ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং উপনিবেশিক প্রভাব থেকে মুক্তির প্রতীক।
দ.ক.সিআর.২৪