➖
মোস্তফা মোর্শেদ◾
গত ১০ ডিসেম্বর ছিল পদক্ষেপ গণপাঠাগারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯০ ব্যাচের বড় ভাইদের সৃষ্টি এ প্রতিষ্ঠান। চুনারুঘাটে বয়সভিত্তিক আড্ডা দেওয়া ও সংঘটন গড়ে তোলার প্রবণতা রয়েছে। বোধকরি, পাঠাগারের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ৯০ ব্যাচের অবদানই চোখে পড়ার মতো। মাজহার ভাই ও তাঁর বন্ধুদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
দীর্ঘ পথচলায় আমাদের অনেক বন্ধু হয়েছে, বেড়েছে ঋণ। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। তাঁরাই আমাদের অনুপ্রেরণার মূল উৎস। বুঝিয়ে বলি, ২০০৮ সাল থেকে এ অবধি বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রতিকূল পরিবেশকে জয় করতে হয়েছে। এসব প্রতিকূলতায় শুভাকাঙ্ক্ষীগণ নিরবছিন্নভাবে আমাদের পাশে ছিলেন। পাঠাগার পরিবারের বাইরে যারা রয়েছেন তারা এ বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন না।
আমাদের অনেক সফলতা রয়েছে। মোট বইয়ের সংখ্যা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, বিভিন্ন আঙ্গিকে বই পাঠ প্রতিযোগিতাসহ যে সকল অনুষ্ঠান হয়েছে তার গুণগত মান ঈর্ষণীয়। এছাড়া একটি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন চুনারুঘাট গড়তে বিগত দিনে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। উদাহরণস্বরূপ বলতে চাই, যারা পাঠাগারের বার্ষিক শিক্ষা সফরে গিয়েছেন তাঁরা একটা ধারণা নিতে পারবেন।
সকল প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও দুর্বলতা থাকে। পাঠাগারের যে দুটি বৈশিষ্ট্য বাকিরা গ্রহণ করতে পারে; এক) আমাদের কাছে ১ টাকা মানে ১০০ পয়সা। আর্থিক স্বচ্ছতার জায়গাটি আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। দুই) একটি সংগঠন চলার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করা দরকার সেখানে পাঠাগারের কর্মীরা সবাই স্বার্থহীনভাবে সদা প্রস্তুত।
দুর্বলতার প্রসঙ্গে বলতে হয়; আর্থিক সচ্ছলতা একেবারেই নেই। সরকারি অনুদানের বাইরে আজীবন সদস্যগণের আর্থিক অনুদানই আমাদের আয়ের প্রধান উৎস। আমরা চিরঋণী “আজীবন সদস্যগণের” প্রতি।
অনেকের ধারণা এসব পাঠাগারের কোনো উপযোগিতা নেই। খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলতে চাই, আপনি যদি এক স্রষ্টায় বিশ্বাসী হতে চান তবে আপনাকে রবীন্দ্রনাথ, রুমি, শেক্সপিয়ার, বেকন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, নিউটন, কিংবা আইনস্টাইন, কার্ল মার্ক্স, সাত্রেকে জানতে হবে। পৃথিবীর অধিকাংশ জ্ঞানীগণ স্রষ্টায় বিশ্বাসী; কতিপয় ব্যতিক্রম রয়েছে। স্রষ্টাকে জানার পরবর্তী ধাপ হিসেবে নিজেকে জেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বইপাঠের কোনো বিকল্প নেই।
চাকরির সুবাদে আমার অনেক উপজেলা দেখার সুযোগ হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, সার্বিক বিবেচনায় চুনারুঘাট বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপজেলা। একটা নমুনা বলি, দেশের অধিকাংশ জায়গায় যখন বন্যা কবলিত তখনও আমাদের জীবন-যাপন স্বাভাবিক থাকে। আমাদের এলাকার যে সম্ভাবনা রয়েছে তা ঠিকমতো কাজে লাগালে আমরা সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে যাবো।
পরিশেষে, একটা অনুরোধ করি। চুনারুঘাট নতুন বাজারে আমরা একটি জমি পেয়েছি (সেবক ভাইয়ের মাধ্যমে)। সেখানে পাঠাগারের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটা বড় অঙ্কের আর্থিক বিষয় এর সাথে সম্পৃক্ত। অনুদান হিসেবে খুব সামান্য পরিমাণ টাকাও আমাদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি হয়ে উঠবে।
লেখক: মোস্তফা মোরশেদ, ডেপুটি সেক্রেটারী পাবলিক এডমিস্ট্যাশন, বাংলাদেশ সরকার।
দ.ক.সিআর.২৪