➖
কালনেত্র ডেস্ক◾
সালাম দেয়া ও এর জবাব দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাই, ঠিক যেভাবে রাসূলে কারীম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। এই জবাবটি কি বর্ণিত হয়েছে: “ওয়া লাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু ওয়া-মাগফিরাতুহু” ?
সালামদাতা কেবল ‘আসসালামু আলাইকুম’ এইটুকু বলার মাধ্যমে সালাম দিতে পারেন। যদি সে ‘ওয়া-রাহমাতুল্লাহ’ বৃদ্ধি করে তাহলে সেটি উত্তম। আর যদি সে ‘ওয়া-বারাকাতুহু’ বৃদ্ধি করে তাহলে সেটি আরো উত্তম ও কল্যাণকর।
যাকে সালাম দেয়া হলো তার উপর ওয়াজিব ন্যূনতম অনুরূপ বাক্য দিয়ে সালামের জবাব দেওয়া। যদি সে এর সাথে কিছু যুক্ত করে তাহলে সেটি আরো উত্তম। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর যখন তোমাদেরকে কোনো অভিবাদন জানানো হয়, তখন (তার জবাবে) তোমরা তার চেয়ে ভালো অভিবাদন জানাবে কিংবা (অন্ততপক্ষে) একই অভিবাদন ফিরিয়ে দিবে।” সূরা নিসা: ৮৬
ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন: উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর একটি উঁচু ঘরে ছিলেন। তিনি তাকে বললেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আসসালামু আলাইকা। উমর কি ঢুকবে?’ [হাদীসটি আবু দাউদ (৫২০৩) বর্ণনা করেন এবং শাইখ আলবানী সহীহু আবী দাউদে এটিকে সহীহ বলেন]
তিরমিযী (২৭২১) বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাক্ষাৎ পাওয়ার পর যেন বলে: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু।”[হাদীসটি শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে সহীহ বলেছেন]
ইমরান ইবনুল হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন: এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন: আসসালামু আলাইকুম। তিনি তার উত্তর দিলেন। লোকটি বসে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “দশ।” (অর্থাৎ দশ নেকী)। তারপর আরো একজন এসে বলল: আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহ। তিনি তার উত্তর দিলেন। লোকটি বসে গেল। তিনি বললেন: “বিশ।” তারপর আরো একজন এসে বলল: আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু। তিনি এর উত্তর দিলেন। লোকটি বসে গেল। তিনি বললেন: “ত্রিশ।”[হাদীসটি আবু দাউদ (৫১৯৫) ও তিরমিযী (২৬৮৯) বর্ণনা করেন, শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযী গ্রন্থে এটিকে সহীহ বলেছেন]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: “এই যে জিবরীল তোমাকে সালাম দিচ্ছেন।” আয়েশা বলেন: আমি বললাম: ওয়া লাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু।[হাদীসটি বুখারী (৩০৪৫) ও মুসলিম (২৪৪৭) বর্ণনা করেছেন]
ইমাম নববী সালাম প্রদানের পদ্ধতি সংক্রান্ত অধ্যায়ে বলেন: ‘যিনি সালামের সূচনা করবেন, তার জন্য ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু’ বলা মুস্তাহাব। তিনি বহুবচন ব্যবহার করবেন, যদিও যাকে সালাম দেওয়া হচ্ছে সে একজন হয়ে থাকে।
আর যিনি উত্তর দিবেন, তিনি বলবেন: ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু।’ তিনি সংযোজক অব্যয় ‘ওয়াও’ যুক্ত করে ‘ওয়া-আলাইকুম’ বলবেন।’[রিয়াদুস সালিহীন: (পৃ. ৪৪৬)]
সালাম প্রদান ও জবাব প্রদানের ক্ষেত্রে ‘ওয়া-মাগফিরাতুহু’ এই বর্ধিত অংশটি কিছু হাদীসে এসেছে। কিন্তু এটি বিশুদ্ধ নয়। এমন বর্ণিত হাদীসের কয়েকটি হলো:
১- সাহল ইবনে মুয়ায ইবনে আনাস বর্ণনা করেন: তার পিতা থেকে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপর্যুক্ত ইমরানের হাদীসের সমার্থে। তবে এর সাথে অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছে যে: চতুর্থ একজন ব্যক্তি এসে বলল: আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু ওয়া-মাগফিরাতুহু। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: চল্লিশ। তারপর বললেন: “এভাবেই মর্যাদা (বৃদ্ধি) হতে থাকে।” [হাদীসটি আবু দাউদ (৫১৯৬) বর্ণনা করেন। হাদীসটির ‘ওয়া-মাগফিরাতুহু’ অংশকে দুর্বল বলেছেন: ইবনুল আরাবী আল-মালিকী, নববী, ইবনুল কাইয়িম, ইবনু হাজার, আলবানী রাহিমাহুমুল্লাহ]
ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এই হাদীসটি প্রমাণিত নয়। কারণ এর তিনটি ত্রুটি রয়েছে:
ক. এটি আবু মারহূম আব্দুর রহীম ইবনে মাইমূনের বর্ণনা, যাকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।
খ. এতে রয়েছেন সাহল ইবনু মুয়ায। তার অবস্থাও একই।
গ. এর একজন বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে আবু মারইয়াম বর্ণনার ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেননি। বরং বলেছেন: আমার ধারণা আমি নাফে ইবনে ইয়াযীদকে এমনটি বলতে শুনেছি।” [আস-সিলসিলাহ আদ-দঈফাহ (৫৪৩৩)
২- আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অতিক্রম করার সময় বললেন: ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া-রাসূলাল্লাহ’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: “ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু ওয়া-মাগফিরাতুহু ওয়া-রিদওয়ানুহু।” তাকে বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই লোককে এমন এক সালাম দিলেন, যেটা আপনার কোনো সাহাবীকে দেননি। তিনি বললেন: “আমাকে এই কাজে কী বাধা দিতে পারে, যেখানে এটি করলে সে দশের অধিক লোকের নেকী নিয়ে চলে যাবে।” তিনি তার সাহাবীদের খেয়াল রাখতেন।[হাদীসটি ইবনুস সুন্নী ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ’ বইয়ে (২৩৫) বর্ণনা করেন। এটি খুবই দুর্বল হাদীস। ইবনুল কাইয়িম ‘যাদুল মা’আদ’ গ্রন্থে (২/৪১৮) এটিকে দুর্বল বলেছেন। হাফেয ইবনে হাজার এটিকে দুর্বল হিসেবে গণ্য করে বলেন: ইবনুস সুন্নী তার গ্রন্থে দুর্বল সনদে আনাসের হাদীসে বর্ণনা করেন: ‘এক ব্যক্তি অতিক্রম করছিল …’ ‘ফাতহুল বারী’ (৬/১১)]।
৩- যাইদ ইবনে আরক্বাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাম দিলে আমরা বলতাম: ‘ওয়া-আলাইকাস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহ ওয়া-বারাকাতুহু ওয়া-মাগফিরাতুহু।’[হাদীসটি বাইহাক্বী শুয়াবুল ঈমান (৬/৪৫৬) গ্রন্থে বর্ণনা করেন এবং এটিকে দুর্বল সাব্যস্ত করে বলেন: যদি এ হাদিস সহিহ হত তাহলে আমরা এটিই বলতাম। কিন্তু শু’বা পর্যন্ত এর সনদে এমন ব্যক্তি আছে যাকে দিয়ে প্রমাণ পেশ করা যায় না। হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘বাইহাক্বী শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থে দুর্বল সনদে যাইদ ইবনে আরক্বাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। এরপর তিনি হাদিসটি উল্লেখ করেন।‘ফাতহুল বারী’ (৬/১১)]
সুতরাং সালাম প্রদানের সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ কথা হলো: (আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু) এবং জবাবের ক্ষেত্রে সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ কথা হলো: (ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু)।
দ.ক.সিআর.২৪