1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের স্মারক; কাচারি ঘর!

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

 

মুক্তাদির আহমেদ

একসময় গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ গৃহস্থের বাড়িতেই ছিল কাচারি ঘর। একেক এলাকায় এই ঘরগুলোর নামও ছিল একেক রকম। কোথাও বলা হয় টংগি ঘর, কোথাও বাংলা ঘর। কোথাও বা দেউড়ি ঘর। এই ঘরগুলো ছিলো গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ। কালের বিবর্তনে এই ঘরগুলো বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ড্রয়িং রুম কালচারে এই ঐতিহ্যের ঘরগুলো এখন আর তেমন কোথাও দেখা যায় না।

মূল বাড়ি থেকে একটু দূরে আলাদা খোলামেলা জায়গায় এসব কাচারি ঘরের অবস্থান ছিল । অতিথি,পথচারী কিংবা সাক্ষাৎপ্রার্থীরা এই ঘরে এসেই বসতেন। প্রয়োজনে এক-দুই দিন রাত যাপনেরও ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরে।

কাচারি ঘর ছিল বাংলার অবস্থাসম্পন্ন ও মধ্যবিত্ত গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক। চারিদিকে ঢেউ টিনের বেড়া সঙ্গে কাঠের কারুকাজ করে উপরে টিন অথবা ছনের ছাউনি থাকতো কাচারি ঘরে। যা অতি প্রাকৃতিকবান্ধব পরিবেশ দিয়ে আবেষ্টিত ছিল।

তখনকার যুগে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকলে কাচারি ঘরে ছিল আরামদায়ক শীতল পরিবেশ। তীব্র গরমেও কাচারি ঘর বা বাংলা ঘরের খোলা জানালা দিয়ে হিমেল বাতাস বইতো।পারিবারিক উৎসব, আয়োজন, শালিস বৈঠক, গল্প – আড্ডার আসর বসতো এসব ঘরে।

আগের দিনে নিজেদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে পুরুষ অতিথিগন এসব বাইরের ঘরে থাকতেন আর মেয়েরা থাকতেন ভিতর বাড়িতে। ভাটি অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজনদের উপস্থিতিতে কাচারি ঘর বা বাংলা ঘরে বসতো পুঁথি পাঠ ও জারি গান । পথচারীরা এসব কাচারি ঘরে ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নিতেন। প্রয়োজন রাত যাপনের ব্যবস্থা থাকতো এসব ঘরে। অনেকটা মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হত এসব ঘর।

গৃহস্থের বাড়ির ভিতর থেকে খাবার পাঠানো হতো বাংলা ঘর বা টংগি ঘরের অতিথিদের জন্য। আবাসিক গৃহশিক্ষকের (লজিং মাস্টার) ও আররি শিক্ষার ব্যবস্থার জন্য এসব ঘরের অবদান অনস্বীকার্য। গৃহ শিক্ষকদের জন্য এসব ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হত। কোন কোন বাড়ির বাংলা ঘর সকাল বেলা মক্তব হিসেবেও ব্যবহৃত হত। প্রায় সকল বাড়ির এসব ঘরে জায়গীরে থাকা ছাত্র বা গৃহ শ্রমিকদের জন্য থাকতো নির্ধারিত কক্ষ।

আমার নানার বাড়ির পরিত্যক্ত টংগি ঘরের মলিন চেহারা দেখে ভাবনাগুলো মনে জাগলো। কত স্মৃতি। কত উৎসব আয়োজনের স্বাক্ষী এই টংগি ঘর। অনাদরে, অবহেলা আর রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। এভাবেই হারিয়ে যায় ইতিহাস। হারিয়ে যায় ঐতিহ্যের স্মারকগুলো।

দ.ক.সিআর.২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট