➖
আসাদ ঠাকুর
কোনো কিছু লিখলেই আলোচিত এবং বিতর্কের কারণ হওয়া খুব কম লেখকের মধ্যে তসলিমা নাসরিন একজন। তাঁর বিতর্কিত উক্তি এবং বাণী সমূহ একদিকে যেমন গায়ে কাঁটা দিবে, অন্যদিকে বাস্তব কিছু চরিত্রকের তুলে ধরবে। পাশাপাশি দেখা মিলবে প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
বিতর্কিত কবি ও লেখিকা তসলিমা নাসরিন এর জন্ম বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। পিতা ডঃ রজব আলি এবং মাতা এদুল আরা।
১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।
তসলিমা চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক। নির্ভিক সাংবাদিকতা এবং নারীবাদী চিন্তার অন্যতমা মুখপাত্রী। তাঁর অনেক লেখা পাঠক মহলে তীব্র আলোড়ণ এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তিনি একাধারে বন্দিতা এবং নিন্দিতা।
বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন এবং তার রচনা লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচার করায় ইসলামপন্থীদের রোষানলে পড়েন ও তাদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। তিনি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকেরও বেশি সময় বসবাস করার পর, ২০০৪ সালে ভারতে চলে আসেন, কিন্তু ২০০৮ সালে তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। এরপর তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন
তাঁর নামে ইসলাম ও নবী বিরোধী লেখার অভিযোগ এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের দুর্দশার কথা লেখার ফলে সে দেশের মৌলবাদীদের ফতোয়ার শিকার হয়ে, এবং বাংলাদেশ সরকারের মৌলবাদী তোষণ নীতির ফলে তাঁকে দেশ ছেড়ে সুইডেনে বসবাস করতে হয়।
তসলিমার আত্মজীবনীমূলক বই ‘আমার মেয়েবেলা’ শেখ হাসিনার শাসনামলে নিষিদ্ধ হয়েছিল। তসলিমা জানান, তার বাবা মারা যাওয়ার সময় দেশে ফিরে বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে চাইলেও শেখ হাসিনা তার অনুরোধ উপেক্ষা করেন।
তসলিমা দাবি করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রকাশকরা তার বই প্রকাশ করতে ভয় পেতে হতো। কারণ, তারা ধারণা করতেন তার বই প্রকাশ করলে তাদের ওপর হেনস্তা নেমে আসতে পারে।
মাঝে মাঝে তিনি ভারতে এসে কলকাতায় থেকে তাঁর লেখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে ভারতের গণতন্ত্র, ব্যক্তি সাধীনতা ইত্যাদির খানিকটা থাকলেও ভোট বাক্সের দিকে তাকিয়ে কলকাতার কিছু মুসলমান ধর্মীয় নেতাদের কাজে লাগিয়ে, কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে লোক দেখানো দাঙ্গার সূচনা করে, ডিসেম্বর ২০০৭ এর শেষে তসলিমাকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন। তসলিমাকে এর পর ভারত সরকার সুরক্ষার নামে কার্যত নিঃসঙ্গভাবে গৃহবন্দী করে রাখেন দিল্লীর কোন এক অজ্ঞাত স্থানে। মার্চ ২০০৮ এ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় হতাশ হয়ে দুঃখে-অভিমানে তিনি ভারত ছেড়ে চলে যান। দেশের সুশীল সমাজ নানাভাবে বহু প্রতিবাদ সভা, পদযাত্রা, আন্দোলন করেও কিছু সুরাহা করতে ব্যার্থ হন।
বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯৪ সালে সুইডেনেও জার্মানিতে বসবাস করেন। এবং রাজনৈতিক নির্বাসিত হিসেবে জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি লাভ করেন। তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই সময় তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশে ফেরার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হলে তিনি জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি ত্যাগ করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পান ও বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন।
বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রুজু হলে তিনি পুনরায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, বাংলাদেশ, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক শাখারভ পুরস্কার, ফ্রান্স সরকার প্রদত্ত মানবাধিকার পুরস্কার, ফ্রান্সের এডিক্ট অব নান্তেস পুরস্কার, সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল পেন কর্তৃক কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ কর্তৃক হেলম্যান-হ্যামেট গ্রান্ট সম্মাননা, নরওয়েভিত্তিক হিউম্যান-এটিস্ক ফরবান্ড কর্তৃক মানবতাবাদী পুরস্কার অর্জন করেন।
সম্প্রতি আবার একুশে বইমেলার একটি স্টলে তার বই রাখা এবং বিক্রির অভিযোগে হা’ম’লা করা হয়ছে বলে জানা গেছে!
দ.ক.সিআর.২৫