1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৯ অপরাহ্ন

ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

কমরেড বিমল কান্তি দাস

ভারত উপমহাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি তাঁর জন্মলগ্ন থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করে এসেছে। ভারতের স্বাধীনতার জন্য কমিউনিস্ট পার্টির অসংখ্য নেতাকর্মী রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে কমিউনিস্ট পার্টি মেনে নেয়নি, বিরোধিতা করেছে। তখন পাকিস্তানকে মুসলমানদের দেশ বলা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টরা পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতা করে বলেছিল আমরা মুসলিম জাতি নয়, আমরা বাঙালী। এখানে মুসলমান ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষ আছে। আমরা সবাই বাঙালি।

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর শুরুতেই বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ আসলো, বাংলা ভাষার ওপর আক্রমন আসলো। পাকিস্তানের সবচেয়ে কম সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ভাষা ‘উর্দু’ কে তারা গাঁয়ের জোরে রাষ্ট্র ভাষা করতে চাইলো। তমদ্দুনমজলিশ এবং কমিউনিস্ট পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি ও ব্যক্তি – ‘উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রতিবাদ করতে শুরু করে। সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাস্ট্রে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথমেই রক্ত ঝরিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা। পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টির নাম উচ্চারণ করা যেত না, সন্দেহজনকভাবে কমিউনিস্ট মনে করলে তাকে গ্রেফতার করা হতো। ১৯৪৮ সাল থেকে কমিউনিস্টদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়। ওই সময়ে কমিউনিস্ট রাজবন্দিরা কারা অভ্যন্তরেই গণতান্ত্রিক দাবি সমূহের ভিত্তিতে মাসের-পর-মাস আন্দোলন করেছে। অনশনে মৃত্যুবরণও করেছে। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলের খাপাড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট বন্দীরা বিভিন্ন দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেই আন্দোলন দমন করতে বেশ কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু ভাষা আন্দোলন শুরু হতে থাকলে পাকিস্তান সরকার কিছু গণপ্রতিরোধের মুখে পড়ে। পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতায় এই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ গর্জে ওঠে। সাধারণ মানুষ আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকে।

অন্যদিকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ছাত্র সমাজ সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। এ আন্দোলন বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে দেবার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কমরেড তোয়াহা ও কমরেড সহিদুল্লাহ কায়সার, কমরেড রণেশ দাশগুপ্ত ভাষা আন্দোলনের পক্ষে মতামত তৈরি করতে থাকেন। ছাত্র নেতা আবদুল মতিন ও জহির রায়হান কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন, পার্টির সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন জেলায় কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে নানামুখী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে থাকে। গোপনে গোপনে কমিউনিস্ট পার্টি সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় এই আন্দোলনের প্রচার চালাতে থাকে। ভাষা আন্দোলন করার অপরাধে কমরেড শহিদুল্লাহ কায়সারকে ১৯৫২ সালে গ্রেফতার করে এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত জেলখানায় আটক রাখে। ছাত্র নেতা কমরেড আবদুল মতিনের নামে মামলা করা হয়। হুলিয়া জারি করা হয়। আবদুল মতিন ছিলেন ছাত্রদের সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক। জাতীয় নেতাদের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি ১৪৪ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। সেকারণে ছাত্রদের সংগ্রাম কমিটির বেশি অংশ জাতীয় নেতাদের পক্ষে মত দিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিপক্ষে ছিলেন। কমরেড আবদুল মতিনের নেতৃত্বে ছাত্রদের সংগ্রাম কমিটির একটা ছোট অংশ জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে সাধারণ ছাত্রদের মতামত ও সমর্থন সংগ্রহ করেছিলেন। সাধারন ছাত্ররা দলে দলে আবদুল মতিনের বক্তব্য সমর্থন করায় ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমরেড আবদুল মতিনের এই ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল মূলত কমিউনিস্টদের ভূমিকা। তখনকার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ সারা দেশে সর্বশক্তি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছেন। তখন কমিউনিস্ট পার্টি বেশির ভাগ সময়ে ছিল নিষিদ্ধ। তাই পার্টির নেতা-কর্মীদের নামে বেনামে আন্দোলনে অংশগ্রহন করতে হয়েছে। পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবল জোয়ারের বিপরিতে এই প্রথম (পাকিস্তান সৃষ্টির পর) রাজনীতিতে প্রগতিশীল ধারা সামনে তুলে ধরেছিল ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন।

দ.ক.সিআর.২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট