➖
তানভীর আহমদ রাহী, কালনেত্র
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার খোয়াই নদী বর্তমানে চরম বিপর্যয়ের মুখে। উপজেলার রাজার বাজার, আসামপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অপরিকল্পিত ও মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
প্রতিনিয়তই এই বালু উত্তোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্থানীয় পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈধ অনুমোদন থাকলেও পরিকল্পনাহীন বালু উত্তোলনের কারণে নদীর আশপাশের মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এর পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনও চলছে প্রকাশ্যে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম চললেও প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে আশপাশের সড়কগুলোরও ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালে সংস্কার হওয়া আসামপাড়া-চুনারুঘাট সড়ক এক বছরের মধ্যেই ভাঙতে শুরু করেছে। ভারী ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ইতোমধ্যেই প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে পানিদূষণ বাড়ছে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। এতে হাইড্রোলজিক্যাল প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে কৃষিজমির উর্বরতা হারাবে এবং নলকূপের পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ছাড়া এই সংকটের কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। তবে তা অবশ্যই পরিবেশগত সমীক্ষার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ইজারা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ আরও ২৫০ কোটি মানুষ নগরবাসী হবে, ফলে অবকাঠামো নির্মাণে বালুর চাহিদা আরও বাড়বে। তাই এখনই পরিবেশবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে খোয়াই নদীসহ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
দ.ক.সিআর.২৫